শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বললেন ভিসি
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ভিসির নির্দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সদ্য পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবির। এদিকে, শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বলে গালাগাল করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ভিসি নাসির উদ্দিন।
শিক্ষার্থীদের গালাগাল ও তাদের বাবা-মা নিয়ে অরুচিপূর্ণ মন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, সরাসরি ভিসি খোন্দকার মো. নাসির উদ্দিন ও প্রশাসনের কাছ থেকে এ হামলার নির্দেশ এসেছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে ভিসি খোন্দকার মো. নাসির উদ্দিন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দিতে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন ওই শিক্ষক।
আপনার বিরুদ্ধে গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করানোর অভিযোগ উঠেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ভিসি বলেন, আমি বাসায় ছিলাম। ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। আমার আয়ত্বের বাহিরে। তাই আমি হামলা থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে পারিনি।
তাহলে শিক্ষার্থীদের ওপর কারা হামলা করেছে? এ প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, আমি শুনেছি এলাকাবাসী হামলা করেছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছেন বলে জানান তিনি।
গত চার দিন ধরে গোপালগঞ্জে এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ঠেকাতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন ভিসি নাসির উদ্দিন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামলে বহিরাগত একদল হামলা চালায় শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে আহত হন ২০ শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ফেসবুকে লেখার জেরে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। উপাচার্য বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জোর আন্দোলন গড়ে তোলেন।
শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বলে গালাগাল করে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ভিসি নাসির উদ্দিন।
শিক্ষার্থীদের জানোয়ার বললেন ভিসি:
শিক্ষার্থীদের গালাগাল ও তাদের বাবা-মা নিয়ে অরুচিপূর্ণ মন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা।
অডিও ক্লিপে উপাচার্য বলেন, এই তোর আব্বা কি করে? এই জানোয়ার তোর বাপ বিশ্ববিদ্যালয় চালায়? জানোয়ারের দল। তোর আব্বারে ভিসি বানায় দি (বানিয়ে দেই)। তোর বাপেরে চালাইতে ক। দেখি কি চালায় তোর আব্বা। কি আগুন জ্বালাবি এই জানোয়ার। এই কী আগুন জ্বালাবি, কেন জ্বালাবি, কোন কোন জায়গা জ্বালায় আইছিস (এসেছিস)। তোরে তো এখন লাথি দিয়ে বের করে দিতে ইচ্ছা করতেছে। কোনডারে ছাড়ব না। একটার চেয়ে আরেকটা বেশি। তোরা চালা তাইলে বিশ্ববিদ্যালয়। এদের কথা শুনলি (শুনলে) মরা মানুষ তাজা হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীদের রুমে ডেকে এভাবে গালমন্দ করেছেন ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিন। কোন শিক্ষার্থী ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভিসির পাশে বসে তা পড়ে শোনাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আশিকুজ্জামান ভূইয়া। শুধু ওসব শিক্ষার্থীকেই নয়, তাদের বাবা-মাকে ডেকে এনেও শোনানো হয়েছে মন্দ কথা। করা হয়েছে অপমান। শিক্ষার্থী ও তাদের মা-বাবাকে গালমন্দ করা অডিও ক্লিপটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
জানা যায়, ৫ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শ্রেণিকক্ষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কৃতরা ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পরে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পক্ষে ক্ষমা চাইতে তাদের সহপাঠীরা উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের অফিসে যান। তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাদের জানোয়ার বলে গালি দেন ভিসি।
ওই সময় প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূইয়া এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে বলেন, স্যার ও লিখেছে প্রতিবাদ করলে বহিষ্কার করবে তো? করুক, কয়জনকে বহিষ্কার করবে। আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি।
এ কথার উত্তরে ভিসি বলেন, তুরা (তোরা) চালা আইসা ইনভারসিটি (ইউনিভার্সিটি)। তোর বাপ-মায়েরা আইসা চালাক। আমরা ছাইড়া (ছেড়ে) দি। এই যা বাইর (বের হ)।
এ সময় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বার বার ক্ষমা চাইছিলেন। তাতেও থামছেন না ভিসি। তোর আব্বারে আইনা (এনে) চালা। তোর আব্বা বানাইছে বিল্ডিং? ১০৩ রুম কারে দেব, তোর কাছে শোনব? তোর কাছে শোনব না তোর মায়ের কাছে শোনব। ১০৩ নম্বর নিয়ে তোর এত হেডেক ক্যান। ওই রুমডা (রুমটা) কি তোর আব্বার? এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছিল এক শিক্ষার্থীর মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়ার আকুতি।
এ সময় ভিসি বলেন, এই আপনার ছেলে কোনডা (কোনটা)? কি করেন আপনি? ও শিক্ষক আপনি? আপনার ছেলে লেখছে (লিখেছে) কিন্ডারগার্টেন এটা। কিন্ডারগার্টেনে আপনার ছেলেকে ভর্তি করছেন কেন? এই কিসের জন্য কিন্ডারগার্টেন লিখেছিস। লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দেব এই জায়গা থেকে। এই জানোয়ার। তোর চৌদ্দ পুরুষের সাধ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তুই তো জীবনেও চান্স পাতি না। আমি এই বিভাগ খুলছিলাম (খুলেছিলাম) বলে তুই চান্স পাইছিলি (পেয়েছিলি)। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই জায়গায় কি কি খারাপ তুই ক। তোর শাস্তি অবেই (হবেই)। সবাই যদি কয় কিন্ডারগার্টেনে পড়ি। তলিতো আমি ভিসি থাকি না। আমি তো হেডমাস্টার হইয়া যাই।