ভিসির পদত্যাগ দাবিতে একাত্মতা ঘোষণা শিক্ষকদের
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা। চলমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামীকাল রোববার থেকে ১১ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরউদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে আজ সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মেয়েদের হলগুলোতে পানি, বিদ্যুৎ, খাবার সব কিছু সরবরাহ করা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা হল ছেড়ে বাসায় না গেলে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ, হামলার হুমকি দেন প্রভোস্ট। তিনি আরো বলেন, এই স্বৈরাচারী, দূর্নীতিবাজ, নারী কেলেঙ্কারি ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন ও আন্দোলন চালিয়ে যাব।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাদের অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষকদের পাশে থাকার আহবান জানিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, স্যার-ম্যাম হলগুলোতে বিদ্যুৎ নাই, পানি নাই, খাবার নাই। আপনাদের সন্তানদের আজ করুণ অবস্থা। আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা আজ একান্ত কাম্য।
ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ড. মো. শাহজাহান, ড. রাজিউর রহমান, আরিফুজ্জামান রাজীব, শফিকুল ইসলাম, জীবন কৃষ্ণ মোদক, জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, মিনারুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, মো. ফায়েকুজ্জামান, হুমায়ুন কবির, মৃণাল কান্তি, লুৎফুল কবির এবং মশিউর রহমান প্রমুখসহ আরো অনেকে। তারা সবাই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা রক্ষায় যে রক্তের দাগ তোমাদের (শিক্ষার্থীদের) গায়ে লেগেছে তার ন্যায্য বিচার ও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে তোমাদের আন্দোলনের সাথে আমরাও একাত্মতা ঘোষণা করছি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে তাদের ওপর অন্তত পাঁচ বার হামলা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, ভিসির ভাড়া করা স্থানীয় গুন্ডাবাহিনীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে লাঠি, রামদা এবং ইট নিয়ে হামলা করেন। আহত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর বেশিরভাগ গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্তত চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার এক ফেসবুক পোস্টে হামলাকারীদের হুশিয়ার করে বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিষয়। এখানে বহিরাগত কোন সন্ত্রাসী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে গোবরা ইউনিয়নবাসী তার জবাব দেবে।
অন্যদিকে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানানো হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে তারা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী কাউসার আহমেদ জানান, ‘আজকে উপাচার্যের নির্দেশে আমাদের ভাইদের ওপরে হামলা হয়েছে। তারা তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছে। একজন উপাচার্য কতটা নিচু মন মানসিকতার হলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে। আমরা অবিলম্বে এই উপাচার্যের পদত্যাগ চাই’।
তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর কে বা কারা হামলা করেছে, তা আমার জানা নেই।’