১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৪০

নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, নোবিপ্রবি কর্মকর্তার বহিষ্কার দাবি

নোবিপ্রবি কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন  © টিডিসি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় তার বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তারা এ দাবি তোলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। 

মানববন্ধনে নারী শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কাদের রহমানকে তার মন্তব্যের জন্য নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাটির বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রশাসনিক তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের সম্মানহানি ও নৈতিক হয়রানির দায়ে তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত শাস্তি হিসেবে অবিলম্বে উক্ত কর্মকর্তাকে বহিস্কারের দাবি জানান।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৫ অক্টোবর নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের ছাত্রীসংস্থা নিয়ে একটি পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আব্দুল কাদের রহমান নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে "আর নয় গুপ্ত ও পরকীয়া। এবার স্বামী হিসাবে স্বীকৃতি" মানহানিকর, কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন।

তারা বলেন, মোহাম্মদ রহমান কেবল নোবিপ্রবির ছাত্রীদের ব্যক্তিগত মর্যাদা ও নিরাপত্তাবোধকে হেয় করেনি, বরং নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সামষ্টিকভাবে ঘৃণাপূর্ণ ও অশালীন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে এ ধরনের নিন্দনীয় বক্তব্য কেবল অনভিপ্রেতই নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা, পেশাগত আচরণবিধি ও নারী-পুরুষ সমতার সাংবিধানিক মূল্যবোধেরও পরিপন্থি।

আরও পড়ুন: চাকসুতে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস বিজয়ের নেপথ্যে

এ বিষয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার রিমি বলেন, ছাত্রীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ, অবমাননাকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কোনোভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতাভুক্ত নয়; বরং এটি সরাসরি হয়রানি, চরিত্রহনন ও মানসিক নির্যাতনের শামিল। ভিন্ন আদর্শ, মত বা চিন্তার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ এই আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সম্মানজনক শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার পথে বড়ো বাধা। আমরা উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

আরেক নারী শিক্ষার্থী রাহীকুম মাখতুম বলেন, নোবিপ্রবি কর্মকর্তা কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা জানি, আমাদের মা-বাবার পরেই প্রশাসনই আমাদের ভরসার জায়গা। সবসময় তারা আমাদের পাশে দাড়িয়ে অবিভাবকের ভূমিকা পালন করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি

উপস্থিত ছাত্রদের মধ্য থেকে শিক্ষার্থী নিশাদ আহমেদ জীবন বলেন, এক কর্মকর্তা কর্তৃক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্লাট শেমিং করা হয়েছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই ক্যাম্পাসে রাজনীতি চাই না। কিন্তু যে শিক্ষার্থী তার মতাদর্শ প্রকাশ করতে চায়, সে একজন নারী শিক্ষার্থী হোক এবং ছেলে শিক্ষার্থী হোক, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভাবে তাকে স্লাট শেমিং করা হয়, এটার জন্য আমি বিন্দু মাত্র ছাড় দিবো না। প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে করে একজন নারী মতাদর্শ প্রকাশ করতে হেনস্তার শিকার না হতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ কে সামনে রেখে নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের মাধ্যমে হেনস্তা করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা শাখা কর্মকর্তা নিয়ম ভঙ্গ করে এখন কর্মরত আছে কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো রকম ব্যবস্তা নিতে দেখিনি।তাই আজকের মানববন্ধন থেকে প্রশাসনকে আহ্বান জানায় অনতিবিলম্বে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।