০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০৮

জব্দকৃত আসবাবপত্র লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ যবিপ্রবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

যবিপ্রবি লোগো  © সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের জব্দকৃত আসবাবপত্র লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) স্টেট শাখার উপ রেজিস্ট্রার মোঃ জাহাঙ্গীর কবীরের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে দুটি খাট ও তোষক জব্দ করেন আনসার সদস্যরা। 

এছাড়াও জব্দকৃত ফ্রিজ ও মাইক্রো ওভেন নিজের অফিসে তাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি থেকে ফিরে না আসায় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগের শিক্ষক ড. জাকিরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। ওই শিক্ষকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওয়া টাকা পরিষদ না করায় তার বাসার জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাজেয়াপ্ত করে রাখেন। অভিযোগ উঠে উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আসবাবপত্র কৌশলে নিজের বাসায় নিয়ে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর ড. জাকিরের বাসা থেকে দুটি খাট ও তোষক নিয়ে যাওয়ার সময় ছাড়পত্র না থাকায় আটক করেন নিরাপত্তা কর্মীরা। সে সময় নিরাপত্তা কর্মীরা ভ্যানচালককে মালামালের মালিক কে জিজ্ঞেস করলে ভ্যানচালক উপ রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীরের নাম্বার দেয়। তবে জাহাঙ্গীরের কাছে ভ্যানচালকের কথা জানতে চাইলে তিনি ভ্যানচালককে চিনেন না বলে অস্বীকার করেন।

তবে মালামাল আটকের পূর্বে উপ রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর ভ্যানচালকের সাথে একাধিক বার মোবাইল ফোনে কথা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জব্দের পর উপ রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে মালামালগুলো তাদের দাবি করে বের করে দিতে সহযোগিতা চান কিন্তু ঐ দুই শিক্ষক এতে রাজি হননি। 

আরও পড়ুন: ছিলেন কলেজের প্রাণীবিদ্যার ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে বানানো হয় কৃষির শিক্ষক, তিনি এখন প্রো-ভিসি

একাধিক শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কোন মালামাল বা আসবাবপত্র জব্দ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট শাখার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। স্টেট শাখার দায়িত্বে উপ রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর নিজেই।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বললে তিনি এবিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে উপ রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীরের কথা বলার সময় তিনি বলেন, আগের দিন বিকেলেই তিনি রেজিস্ট্রারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পর তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মোঃ রাফিউল হাসান বলেন, ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের পর যাদেরকে আমরা সন্দেহভাজন পেয়েছি, আজকেই তাদের সাথে বসব। আশা করছি, আমাদের যে সময় দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের মধ্যেই একটি পরিপূর্ণ এবং সঠিক প্রতিবেদন আমরা জমা দিতে পারব।

ভ্যান চালক বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর মো, জাহাঙ্গীর কবির আমাকে আমবতলা বাজার থেকে নিয়ে যান কিছু আসবাবপত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতলা শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানে তিনি আমার ভ্যানে দুটি খাট এবং তোষক তুলে দেন এবং আমাকে বলেন গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উনি ছাড়পত্র নিয়ে আসতেছেন। আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় গেইটে অবস্থানরত নিরাপত্তা কর্মীরা আমাকে বাধা দেয়।  

দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন, ছাড়পত্র না থাকায় আমরা আসবাবপত্র গুলো জব্দ করি এবং এ ব্যাপারে সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অবগত করি।

অভিযোগ অস্বীকার করে মোঃ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘জব্দকৃত আসবাবপত্রগুলো আমার অধীনস্থ আসবাবপত্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে আমার অধীনস্থ সকল আসবাবপত্র আমি বিশ্ববিদ্যালয় কে বুঝিয়ে দিতে পারব।’ ভ্যানচালক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ওই ভ্যানচালককে চিনি না, তার সাথে আমার কোনদিন কথা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে অবগত হয়েছি। এর ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই আমরা অতি দ্রুত অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

প্রসঙ্গত, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে কর্মরত পাঁচজন অনুপস্থিত কর্মচারীর নামে ভুয়া বেতন শীট তৈরি ও সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ‘বিএসএস’র সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টেট ও নিরাপত্তা শাখা) মো. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় এবং কমিটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য সুপারিশ করে।