অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়ে এনসিপির কর্মসূচিতে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার আজাদ খান ভাসানীর বিরুদ্ধে চিকিৎসাজনিত কারণে অর্জিত ছুটিতে থেকেও মাঠপর্যায়ে এনসিপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট চিকিৎসকের পরামর্শে ‘লোয়ার লিম্ব ব্যাক পেইন’ সমস্যার জন্য তিনি মেডিক্যাল ছুটি নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার আহাম্মদ হোসেন সিদ্দিকীর সুপারিশে তাকে ১২ সপ্তাহের বেড রেস্টে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ভিত্তিতে ৩ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৭ দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
কিন্তু ছুটি শুরুর মাত্র চারদিন পর, অর্থাৎ ৭ আগস্ট থেকেই আজাদ খান ভাসানী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। জনসংযোগ, নৃত্যানুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ একাধিক কর্মসূচিতে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। বিশেষ করে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে এনসিপির কৃষক উইংয়ের প্রথম কার্যসভা অংশগ্রহণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছুটি মঞ্জুরের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ আগস্ট ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডি.সি) আয়োজিত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের প্রতিনিধির সাথে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা, ২২ আগস্ট মির্জাপুর উপজেলার অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠান, ২৮ আগস্ট এনসিপির টাঙ্গাইলের ঘাটাইল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ১২ সেপ্টেম্বর ‘শ্রমিক সমাবেশ’ (গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখা) এবং গত ১৯ সেপ্টেম্বর শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘সমন্বয় সভা ২০২৫’এ অংশগ্রহণ করেছেন আজাদ খান ভাসানী। এছাড়াও অনেক আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা থাকাবস্থায় তাকে এনসিপির বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১-এর ৪৭ নম্বর ধারা এবং ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট পাস হওয়া রিজেন্ট বোর্ড ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। সে অনুযায়ী তার কর্মকাণ্ডকে বিধি বহির্ভুত হিসেবে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির একাধিক ধারা ভঙ্গেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশি প্রটেকশনে দলের নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দরবার হলে আনা, বিভিন্ন অঞ্চলে সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়া এবং কৃষক উইং গোছানোর গুরু দায়িত্ব নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ বহণ করে।
এদিকে, আজাদ খান ভাসানীর অফিস উপস্থিতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তিনি বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের তত্ত্বাবধানে থাকলেও তথ্য অধিকার আইনে উপস্থিতির রেকর্ড চাওয়া হলে ডিন ড. মো. ইদ্রিস আলী কোনো তথ্য দেননি। এতে স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে আজাদ খান ভাসানী বলেন, কোথাও গেলে কোমরের বেল্ট ব্যবহার করেই যাই। বিএনপির অনেক কর্মকর্তাও অফিস করছে না। আমি সুনামের সাথে অফিস করেছি, যার ফলে আমার অর্জিত ছুটি আছে। অর্জিত ছুটিগুলো মেডিক্যাল কারণ ছাড়া কাটানো যায় না।
তিনি বলেন, সহকর্মীদেরও বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব চাকরি ছেড়ে দেবো। লোন থাকায় এখনো চাকরি ছাড়তে পারছি না, তবে সুযোগ পেলে ছেড়ে দেবো। এখন যেহেতু অফিসিয়ালি ছুটিতে আছি, তাই বেতন-ভাতা নিচ্ছি। যেহেতু আমার অর্জিত ছুটির সুযোগ আছে ২৮ তারিখ ছুটি শেষ হলে আবারও অর্জিত ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগে আমাকে এপ্লিকেশন দিয়েছে নাকি মেডিক্যাল অফিসারকে দিয়েছে সেটার কাগজ দেখতে হবে। সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রক্রিয়া, সে প্রক্রিয়াতেই ফরওয়ার্ড করেছি। কেউ বাইরে কি করলো না করলো এটা আমার দেখার বিষয় না, পরবর্তীতে যদি কোনো রিপোর্ট আসে সে ছুটি নিয়ে বেড রেস্টে না যেয়ে অন্য কিছু করছে তখন দেখা যাবে।
তিনি বলেন, সে (আজাদ) আমাকে বলেছে সে রেস্ট নিচ্ছে। রাজনীতির বিষয়টা এখনও আমাদের কনসার্নে আসেনি। যদি আমাদের কনসার্নে আসে তখন প্রশাসনিক বডিকে রিপোর্ট করতে পারি বিষয়টা। আমি তো একা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারব না।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইতোমধ্যেই অসংখ্য রাজনৈতিক পোস্টার চোখে পড়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আজাদ খান ভাসানী এমপি প্রার্থী হিসেবেও মাঠে নামতে পারেন। পোস্টারগুলোতে তাকে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি এনসিপির ‘কৃষক উইং’ গোছানোর দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানা গেছে।