২২ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:১২

দেশের প্রথম পায়ে হাঁটা বাংলাভাষী রোবট ‘লি’র আবিষ্কার

উদ্ভাবক টিমের সাথে রোবট ‘লি’।  © হাবিব রহমান

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সামাজিক রোবট ‘সোফিয়া’র কথা নিশ্চয় আমাদের সবার মনে আছে। সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সোফিয়া বাংলাদেশে এসেছিল ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেদিন সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন বলেছিলেন, ‘একদিন বাংলাদেশেও রোবট মানবী সোফিয়ার মতো ‘সামাজিক রোবট’ সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে।’ তার সেই উক্তিকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) একদল শিক্ষার্থী। আবিষ্কার করেছে দেশের প্রথম বাংলাভাষী পায়ে হাঁটা রোবট ‘লি’।

সামাজিক রোবট ‘রিবো’ আবিষ্কারের পর এবার হিউম্যানোয়েড রোবট বা ‘মানবিক রোবট’ ‘লি’র আবিষ্কারের মাধ্যমে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রভাষক নওশাদ সজীবের নেতৃত্বে ‘ফ্রাইডে ল্যাব’ নামে পাঁচ সদস্যের একটি টিম এই রোবট আবিষ্কার করেন। এটি দেশের প্রথম পায়ে হাটা রোবট বলে দাবি করছেন উদ্ভাবকদল।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে ‘লি’ নামে রোবটটি সবার সামনে উন্মুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের ইনভেশন ফান্ডের ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ রোবট টি তৈরিতে সময় লেগেছে তিন বছর।

মানবিক রোবট ‘লি’ অনেকটা মানুষের মতই দুই পায়ে হাটতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বাংলা ভাষা বুঝে কথার উত্তর দিতে পারে। ফেস রিকগনিশনের মাধ্যমে মানুষকে মনে রাখতে পারে। চোখ, চোখের পাতা, ঠোট প্রভৃতির মাধ্যমে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন করতে পারে। এছাড়াও হ্যান্ডশেক, নাচা, স্যালুটসহ বিভিন্নরকম অঙ্গভঙ্গি করতে পারে রোবট ‘লি’।

বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিতে রোবট ‘লি’।  ছবি: হাবিব রহমান

বোরটের নামকরণ ‘লি’ করার বিষয়ে উদ্ভাবকেরা বলেন, বাংলা স্বরবর্ণ থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি লিপি হল ‘লি’ যা দেখতে ৯ (নয়) এর মত ছিল। বাংলা ভাষার প্রতি গুরুত্ব বিবেচনায় রোবটটিকে ‘লি’ নামকরণ করা হয়। যার আইডিয়া দেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিন সুলতানা।

ফ্রাইডে ল্যাবের বাকি সদস্যরা হলেন আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রূপক, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাইফুল ইসলাম, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোহাম্মদ সামিউল হাসান ও জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি। টিমের এই পাঁচজন সদস্যের বাহিরেও গত তিন বছর সাজিদ, শান্ত, খাইরুল, শোভন, সোহান, জান্নাতসহ আরও অনেকে কাজ করেছে বলে জানান ফ্রাইডে ল্যাবের সদস্যবৃন্দ।

রোবট ‘লি’র বিষয়ে নওশাদ সজীব জানান, বাংলাদেশে তৈরি হিউম্যানোয়েড রোবটটি দেখতে মানুষের মত এবং এর উচ্চতা ৪ ফুট ১ ইঞ্চি (১২৬ সেমি) এবং ওজন ৩০ কেজি। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি মানুষের মত হাটতে পারে, বাংলায় কথা বলতে পারে, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

তিনি আরও জানান, ফ্রাইডে ল্যাবের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গত ২০ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি এর উদ্বোধন করেন। সেসময় ‘লি’ প্রতিমন্ত্রীকে ডান হাত উঁচু করে স্যালুট দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে এবং হেটে তার সামর্থ্য দেখায়।

টিমের অন্য সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি এর আগের রোবট ‘রিবো’ যার সাথে বর্তমান ‘লি’ এর পার্থক্য হচ্ছে ‘লি’ হাটতে পারে। রোবটকে হাঁটানোর জন্য অনেক দামি মোটর প্রয়োজন। আমাদের বাজেট বাড়ানো হলে উন্নত মানের রোবট তৈরি করতে পারবো।

টিমের সদস্য মেহেদী হাসান রূপক জানান, ‘আমিসু’ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম একটি ইন্টিলিজেন্ট রোবট যেটি ভালোভাবে হাটতে পারে যা ক্রয় করতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদেরকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হলে আমরা এমন রোবট তৈরি করতে পারবো।

টিমের অপর সদস্য জিনিয়া সুলতানা জ্যোতি বলেন, রোবটটি বাংলায় যাতে কথা বলতে পারে অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি নিয়ে আমি কাজ করেছি। রোবটটিকে গান, কবিতা ইত্যাদিও শিখানো হয়েছে। সাধারণত বাসা-বাড়ি এবং অফিসে ব্যবহার করা হয় এমন সব ভাষা লি’কে শিখানো হয়েছে।

রোবটটিতে শক্তিশালী মোটর সংযোজন করে তার হাঁটার দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যেকোনো সেক্টরে কাজে লাগানো যাবে বলে জানান মোহাম্মদ সামিউল হাসান। ইন্ডাস্ট্রি, ট্রাফিক কন্ট্রোল, বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসসহ যেকোনো জায়গায় মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারবে রোবট ‘লি’।