১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৫:০৭

যবিপ্রবিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: ৫ শিক্ষক-কর্মকর্তা বরখাস্ত, ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) নানা অনিয়ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দুই শিক্ষক ও দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও এক কর্মকর্তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও আট শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।  

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে যবিপ্রবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ১০৮ তম সভায় এ সিদ্ধান্তসমূহ নেওয়া হয়। 

সভায় স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপ প্রদান, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের আপগ্রেডেশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার ভিত্তিপ্রস্তরের সম্মানে নতুন ফটক নির্মাণ, অ্যাক্রেডিটেশন রিসার্চ সেল চালু এবং যবিপ্রবির নাম ও লোগো ব্যবহার করে অনুমোদনহীন ফেসবুক পেইজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যবিপ্রবি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রিজেন্ট বোর্ডের সকল সদস্যদের সিদ্ধান্তের আলোকে ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিটিআর) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফিরোজ কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্বৈরাচারের হাতকে শক্তিশালী করে এমন বক্তব্য প্রদান এবং  জুলাইয়ে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদেরকে জুমার নামাজ পড়তে বাধা, শিক্ষকসুলভ আচরণের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে  অনুমতিবিহীন বিদেশে পোস্টডক করতে যাওয়ায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. অছিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এছাড়াও দুদকের  চার্জশিটভুক্ত মামলার আসামি পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পূর্ত (পিএনডি)  দপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ ও  পূর্বে স্থগিতকৃত বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে  ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিউল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড। একইসঙ্গে তদন্ত বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন ৫ এর ছ, ঞ অনুযায়ী যশোর জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও  যবিপ্রবির কর্মকর্তা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেলালুল ইসলামকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছে। 

এদিকে ২০২২ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাংবাদিক শিহাব উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় চার ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে  বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (এআইএস) বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকিব ইবনে সায়েদ, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নাসিম বাহার, একই বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের নূর আলম এবং একই বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের সৌমিক। তৎকালীন সময়ে তারা সবাই  নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যবিপ্রবি শাখার সাবেক সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী ছিলেন। 

এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট অপারেটর পদে চাকুরি প্রার্থী অপহরণ মামলার আসামি ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ রাফিকে হল থেকে বের করতে বাধাপ্রদান করার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃতরা  হলেন, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও অপহরণ মামলার আসামি ছাত্রলীগকর্মী মোহাম্মদ রাফি একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের  আল মামুন ফরহাদ তুষার ইমরান ও কাবিরুল।  

এদিকে যবিপ্রবিতে রিসার্চ ফেলোশিপ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা দেড় বছরের মাস্টার্সে (থিসিসসহ) অংশগ্রহণ করবেন, তারা ১২ মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ফেলোশিপ পাবেন। এছাড়া যারা ২ বছরের মাস্টার্স কোর্সে (রিসার্চ মাস্টার্স) অংশগ্রহণ করবেন, তারা ১৮ মাস পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ফেলোশিপ পাবেন। তবে মাস্টার্সে ফেলোশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরকে কমপক্ষে একটি প্রকাশনা প্রকাশের শর্ত রয়েছে।

এছাড়াও অ্যাক্রেডিটেশন রিসার্চ সেল চালু,  শিক্ষার্থীদেরকে স্বনির্ভর ও উদ্যোক্তা তৈরিতে ইনোভেশন–স্টার্ট-আপ সাপোর্ট সেল গঠনের সিদ্ধান্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের তিনটি ও কর্মচারীদের চারটি আপগ্রেডেশনের সুপারিশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক যবিপ্রবির স্থাপিত প্রথম ভিত্তিপ্রস্তরের সম্মানে নতুন ফটক নির্মাণ এবং যবিপ্রবির লোগো ও নাম সম্বলিত ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ (বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিবিহীন) আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ না করলে (এডমিন ও মডারেটরদের) বর্তমান শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ড।