কুয়েট সমস্যার সমাধান হয়েও হলো না শেষ!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ PM , আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ PM

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে বহিরাগতদের নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েকবার উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ জানান।
একদিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করলে, অপরদিকে শিক্ষকরা মানববন্ধন করেন। শিক্ষার্থীরা একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে শিক্ষক সমিতি পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শিক্ষকরা বিভিন্ন কর্মসূচির প্রতিবাদও জানান। সর্বশেষ উপাচার্যের অপসারণের আগে শিক্ষক সমিতি জানান, তারা এই অপসারণ মেনে নেবেন না এবং অপসারণের পর এটিকে ‘ন্যায় বিচারের পরাজয়’ হিসেবে মন্তব্য করেন।
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ক্লাস শুরু করার আগে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা ক্ষমা চাইব। এটা আমাদের পরিকল্পনায় আছে। আগে সম্পর্কটা আগের মতো করব, তারপর ক্লাসে ফিরব— শেখ মুজাহিদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, কুয়েট।
ফলে উপাচার্যের অপসারণের মধ্য দিয়ে একটি সমস্যার সমাধান হলেও, নতুন করে আরেকটি সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন প্রশ্ন উঠছে—শিক্ষকদের ক্লাসরুমে কীভাবে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হবে, এবং ভবিষ্যতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হবে, সেটিও দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে কুয়েট উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্র প্রতিনিধি শেখ মুজাহিদুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা কয়েকবার শিক্ষকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছি—এটা সত্যি। তবে আমরা চাই ক্লাসরুমে যেন আমাদের সম্পর্ক খারাপ না হয়। তাই শিক্ষকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করব। আমাদের আন্দোলন ছিল প্রশাসনের বিরুদ্ধে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়। আমরা শিক্ষকদের সম্মান করি। আমাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, আমরা ক্ষমা চাইব।
এটা আসলেই একটি জটিল ইস্যু। সবাই উদ্বিগ্ন, হতাশাগ্রস্ত। শিক্ষার্থীরা তো আমাদেরই, দিনশেষে আমাদের কাজ ছাত্রদের নিয়েই। দেশসেবার আশায় অনেক শিক্ষক দেশে ফিরেছেন। এই সমস্যা সমাধানে সময় লাগবে। আমরা আশা করি ছাত্ররা নিজেদের ভুল বুঝবে। সবাই চায়—ক্যাম্পাস সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক। কুয়েটের স্বার্থেই সবাইকে একসাথে থাকতে হবে— ড. মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কুয়েট।
তিনি আরও জানান, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি— ক্লাস শুরু করার আগে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা ক্ষমা চাইব। এটা আমাদের পরিকল্পনায় আছে। আগে সম্পর্কটা আগের মতো করব, তারপর ক্লাসে ফিরব।
তবে শিক্ষকদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ শুরু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল রাতেও অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। বহিরাগতরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। কারা জড়িত, সেটা এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এসডব্লিউসির সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আবার আমাদের আনন্দ মিছিল নিয়েও ব্যস্ততা চলছে। তাই শিক্ষকদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, এটা আসলেই একটি জটিল ইস্যু। সবাই উদ্বিগ্ন, হতাশাগ্রস্ত। শিক্ষার্থীরা তো আমাদেরই, দিনশেষে আমাদের কাজ ছাত্রদের নিয়েই। দেশসেবার আশায় অনেক শিক্ষক দেশে ফিরেছেন। এই সমস্যা সমাধানে সময় লাগবে। আমরা আশা করি ছাত্ররা নিজেদের ভুল বুঝবে। সবাই চায়—ক্যাম্পাস সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক। কুয়েটের স্বার্থেই সবাইকে একসাথে থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কোনো বার্তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,তারা ক্লাসে ফিরবে, সেশনজট মুক্ত থেকে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাবে। তাদের আন্তরিকতা থাকবে। এজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কাজ করবে।
ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে এখন আর কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। কেউ রাজনীতি করে না, তবুও আমরা অপবাদ ও অপমানের শিকার হয়েছি। অধিকাংশ ছাত্র-শিক্ষকই রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চান। তবে প্রশাসন এখনো সেই জায়গায় পৌঁছায়নি, যেখানে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নযোগ্য হয়।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ছাত্রদের আজীবনের অভিযোগ। যখন তারা শিক্ষক হয়, তখন প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে পারে। তাই আমি এখন কিছু বললেও কাজ হবে না।
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ, ছাত্ররাজনীতি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়। পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসের সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ১৬ এপ্রিল ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি তোলে এবং বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারা প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে হলের তালা ভেঙে ফেলে। একদিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে, অন্যদিকে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা মানববন্ধনে অংশ নেন, ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে বৈরিতা তৈরি হয়।