২৮ মার্চ ২০২৫, ১৮:০০

বুটেক্স ক্যাম্পাস পাহারায় কেটে যায় আবু বকরের ঈদ

বুটেক্স ক্যাম্পাস পাহারায় কেটে যায় আবু বকরের ঈদ
আবু বকর  © টিডিসি ফটো

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ ভাগাভাগি। নতুন পোশাকে সেজে ঈদের নামাজ শেষে প্রিয়জনদের সঙ্গে কোলাকুলি আর সুস্বাদু খাবারের আয়োজন! এই তো ঈদের চিরচেনা দৃশ্য। কিন্তু এই আনন্দের বাইরেও কিছু মানুষ থাকে, যাদের ঈদ কাটে একরাশ দায়িত্ব আর ত্যাগের গল্প নিয়ে। তাদেরই একজন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) নিরাপত্তারক্ষী আবু বকর।

ঈদের আনন্দ ও উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। আজ সোমবার (৩১ মার্চ) উদ্‌যাপিত হচ্ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল ফিতর। তাই আপনজনদের সঙ্গে এ ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করতে যার যার গন্তব্যে ছুটে চলেছে সবাই। এ আনন্দঘন মুহূর্তটা বরাবরের মতোই যেন চিরাচরিত চিত্র। তবে চিরাচরিত এ চিত্রের বিপরীত চিত্রও আছে, যা হয়ত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। 

আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছে, যাদের ঈদ আছে কিন্তু আনন্দ নেই। পরিবার আছে কিন্তু পরিবারের কাছে যাওয়ার ব্যস্ততা নেই। পরিবারের কাছে যাওয়ার ফুরসতই নেই। অথচ একই সমাজে বসবাস করেও এদিনে আমরা ঠিকই মেতে উঠব ঈদ আনন্দে। তবে আবু বকরদের ঈদের আনন্দ ক্যাম্পাসের সবকিছু সুরক্ষিত রাখাতেই। 

প্রতিটি ঈদই তার কাছে দায়িত্ব পালনের দিন। যখন পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে যায়, ছাত্র-শিক্ষক সবাই ছুটে যান নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে, তখনও নীরবে নিজের দায়িত্ব পালন করে যান আবু বকর। ঈদের দিনেও ক্যাম্পাস পাহারা দেওয়া তার নিত্যদিনের অংশ হয়ে গেছে। নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবাই যখন পরিবারের কাছে যায়, তখন আমাদের এখানে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। চাইলে কি আর যাওয়া যায়!

আবু বকরের বাড়ি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ নামের এক গ্রামে। সেখানকার ঈদ মানেই আনন্দ আর মিলনমেলা। এলাকার প্রতিটি মানুষ ঈদের সময় জমজমাট হয়ে ওঠে। বড় আয়োজনের মেলা বসে, যা ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। বছরের অন্য সময় কাজের ব্যস্ততায় বাড়ি যাওয়া না হলেও, ঈদে বাড়ির টানটা বেশি অনুভব করেন আবু বকর।

একরাশ আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় ঈদের সময় অনেক বড় মেলা হয়। ছোটবেলা থেকে দেখেছি সবাই দল বেঁধে মেলায় যেত। সেই মেলায় কত আয়োজন! কত স্মৃতি জমে আছে সেখানে। কিন্তু এখন বছরের পর বছর এসব মিস করছি। এবছরও যেতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।

আবু বকর আরো বলেন, আমরা যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি, আমাদের ঈদে ছুটি পাওয়া যায় না। ঈদের সময় তো ক্যাম্পাস অনেক বেশি নিরাপত্তার দরকার হয়। সবাই চলে গেলে তখন আমাদের পাহারার দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। পরিবার খুব মিস করি, কিন্তু কী করবো?

তবে সবচেয়ে কষ্টের জায়গা আরেকটা, ঈদের দিনে ভার্সিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য তেমন কোনো আয়োজন থাকে না। আবু বকর বলেন, কখনো কখনো কিছু স্যাররা পারসোনালি আমাদের  ঈদ বখশিশ দেন। ভালো লাগে। কিন্তু ভার্সিটি থেকে যদি ঈদেের দিনে আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা হতো, কিংবা একটা ঈদ ভাতা দিতো, তাহলে অনেক ভালো লাগতো। পরিবারকে হয়ত কিছু দিতে পারতাম।

তারপরও দায়িত্বের জায়গা থেকে কোনো কমতি নেই আবু বকরের। শেষ কথায় তিনি জানালেন, আমি বুটেক্সের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর সব মুসলমান ভাই-বোনদের জানাই ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকুক, নিরাপদ থাকুক।

তার স্বপ্ন খুব সাধারণ, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা। একটু আনন্দ ভাগাভাগি করা। একদিন যদি সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি বাড়ি ফিরতে পারেন, তাহলে ঈদের সকালে বাবা-মায়ের হাত ধরে ঈদের নামাজে যাবেন, সবার সঙ্গে ঈদের মেলায় ঘুরবেন। পুরোনো সেই দিনের মতো আবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাবেন।