বিজ্ঞান গবেষণায় শাবিপ্রবি শিক্ষকদের বছরব্যাপী যত অর্জন

*ক্যান্সার শনাক্তকরণ *যক্ষ্মা নিরাময় *ফিনাইল ইথানাইল যৌগের প্রস্তুতি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞান গবেষণায় নিত্যনতুন সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নতুন নতুন জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে এখানে কর্মরত শিক্ষকদের গবেষণায়। 

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যান্সার শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবন, যক্ষ্মা নিরাময়, কেমিক্যাল ও পরিবেশ, ভৌতবিজ্ঞান, সমাজ, অর্থনীতির বিভিন্ন শাখায় সমস্যা নির্ণয় ও তার সমাধানে শিক্ষকদের সাফল্য দেশব্যাপী প্রশংসনীয় হচ্ছে। গবেষণায় চলমান সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।

ক্যান্সার শনাক্তকরণ: সাম্প্রতিক দুরারোগ্যব্যাধি ক্যান্সার শনাক্তের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন দেশের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। যা সম্ভব হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই পদার্থবিজ্ঞানের অবসরোত্তর অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষকের দ্বারা। এ প্রযুক্তির ফলে মাত্র ৫০০ টাকার কম খরচে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে শরীরে ক্যান্সার আছে কিনা জানা যাবে। ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামক পদ্ধতিটির পেটেন্ট পেতে ইতোমধ্যে তাঁরা আবেদন করেছেন।

ক্যান্সার শনাক্তের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের ঘোষণা

 

যক্ষ্মা নিরাময়: বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদের গবেষণাপত্র ‘পেপটাইড বেইজড সাবোনিট ভ্যাকসিন ডিজাইন’ যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে ‘ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ লাভ করেন। এ পদ্ধতিতে মাইক্রোব্যাকটোরিয়ামের জিনোমের মধ্যে একটি কমন প্রোটিন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ভ্যাকসিনের সাথে ব্যবহার ব্যাকটেরিয়ায় এন্টিজেন হিসেবে কাজ করবে।

ফিনাইল ইথানাইল যৌগের প্রস্তুতি: রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইউনুসের গবেষণায় কনজুগেটেড ডোনর-একসেপটরযুক্ত ফিনাইল ইথানাইল যৌগের প্রস্তুতি, তাদের অপটিক্যাল ও থার্মাল গুণাগুণ বিশ্লেষণ নিয়ে গবেষণা করে কেমিক্যাল, বায়োকেমিক্যাল ও পরিবেশ বিজ্ঞান শাখায় চলতি বছর ‘ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন।

এছাড়াও পরিবেশের নিরাপত্তায় ফটোক্যাটালিক অ্যাক্টিভিটি ও সেন্সর ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে ভৌত বিজ্ঞান শাখায় একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সোবহান ‘ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। গবেষণায় ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি’ স্বরূপ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে ‘ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ পুরস্কার লাভ করেছেন।

ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ প্রাপ্ত চার শিক্ষক

আর বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে জলবায়ুর ধারণা পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা করে অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক ড. শাহ মো. আতিকুল হক ‘ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ লাভ করেছেন।

‘হাই ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর জার্নাল’ পাবলিকেশনের জন্য এ বছর  ‘ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান। ‘ফুডস ফ্লেভার একটিভ কম্পাউন্ড ডিটারমিনেশন’ শিরোনামে খাবারের সুগন্ধি নিয়ে কাজ করে ‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’ কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কোয়ালিটি-১ র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকা ‘জার্নাল অব দা সাইন্স অব ফুড এন্ড এগ্রিকালচার’ পত্রিকায় তার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।

এদিকে আপাতত দৃষ্টিতে গবেষণায় শিক্ষকদের সাফল্যের পাল্লা তুলনামূলক ভারি হলেও এখানে রয়েছে নানান সঙ্কট। গত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে শিক্ষকদের গবেষণার জন্য ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসাইন বলেন, আমাদের সঙ্কট থাকা সত্বেও ভালো কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ বছর ১৫০টি গবেষণাপত্র নিয়ে ২৫০ জন শিক্ষক কাজ করছেন। বাকি শিক্ষকদের নিজ খরচে গবেষণা চালাতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সঙ্কট নিরসনে সদয় হলে আরও ভালো কাজ করতে পারব।

এদিকে আর্থিক কারণে অনেক শিক্ষক গবেষণা কাজে নি:স্পৃহ হয়ে পড়েন। অনেকে আবার পদোন্নতির জন্য দেশীয় কোন জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে দায়সারা হয়ে পড়েন। কারো কারো গবেষণাপত্রে অনেক সময় প্লেজারিজমেরও অভিযোগ পাওয়া যায়।

সাফল্যের তুলনায় সঙ্কটের কথা মেনে নিয়ে সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা গবেষণার জন্য বাজেট বাড়িয়ে ২৯০ কোটি টাকা করেছি। প্রয়োজনে এ বছর ৪০০ কোটি টাকা করব। কিন্তু কাজ ভালো হতে হবে। কোন ফাঁকি চলবে না। প্লেজারিজম থাকলে চলবে না। শিক্ষকদের কোয়ালিটি উন্নয়নের জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে। ভালো গবেষণা হলে বাজেট নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ