নতুন বছরে হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
- হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৯ PM , আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৬ PM
নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনা, স্বপ্ন ও অগ্রগতির প্রত্যাশা। ২০২৫ সালকে ঘিরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা একটি আধুনিক, সুশৃঙ্খল এবং উন্নয়নমুখী ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত নানা সমস্যার সমাধানে এবার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এমনটাই আশা।
তাদের মতে, নতুন বছরে প্রশাসনের দায়িত্ব কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। বরং শিক্ষার মানোন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, এবং একটি সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলায়ও অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মতামত এবং প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরেছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস এর হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রিয়া মোদক।।
‘নিষিদ্ধ ছাত্ররাজনীতি দমনে কার্যকর পদক্ষেপ দরকার’
আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এটিকে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। নতুন বছরে প্রশাসনের উচিত এ ধরনের কার্যকলাপ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ধরে রাখতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি।
রফিকুল ইসলাম রাকিব, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ
‘আবাসন সংকট সমাধান চাই’
অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটের কারণে বাইরে মেসে থাকতে হয়। বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য এটি আরও চ্যালেঞ্জিং। আমার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব ৩৫০ কিলোমিটার। আমার মতো অনেক দূরের শিক্ষার্থী আছেন, যাদের ছুটি হলেও বাড়ি যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া গরমকালে বিদ্যুৎ সমস্যা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যা পড়াশোনা এবং বিশ্রামে বড় বাধা সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে বেরোবির শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসেন। তাদের পক্ষে মেসের উচ্চ ভাড়া ও পড়াশোনার অন্যান্য খরচ চালানো অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক ছাত্রীকে অসহনীয় মানসিক ও আর্থিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা তাদের পড়াশোনায়ও প্রভাব ফেলে। নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসন সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে এমনটায় প্রত্যাশা থাকবে।
ছওবিয়া জেসিন, ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
‘সমাবর্তন ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশন চাই’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে স্বপ্ন দেখতাম, ‘বন্ধুবান্ধবরা সবাই একসাথে মিলে সমাবর্তনের পোশাক পরিহিত অবস্থায় সমাবর্তনের কালো টুপিগুলো আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছি’ এমন একটা ছবির। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাবর্তন ই হয় না, অনেক আশাহত হয়েছিলাম। সমাবর্তনের পাশাপাশি এমন অনেক শিক্ষার্থী বান্ধব বিষয়গুলো প্রসাশনের দৃষ্টিগোচর করাতে শিক্ষার্থীরা বারবার ব্যর্থ হয়। এই জায়গা থেকে আমি সুন্দর একটি এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
আরও পড়ুন: উৎসব আয়োজন আর আন্দোলনমুখর ছিল ২৪-এর ডুয়েট
সঠিক সমর্থনের অভাবে শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া বেশিরভাগ উদ্যোগ ই অসফল থেকে যায়। সেই জায়গা থেকে এলামনাই এসোসিয়েশন আমাদের শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়াও আমাদের ক্যারিয়ার দিক নির্দেশনা, নেটওয়ার্কিং জন্যও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশন অনেক বড় ভুমিকা রাখে। আমরা বর্তমানে এই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। আশা করি, নতুন বছরে এটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে
সালমা নাবিলা, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
‘ছাত্র সংসদ চাই’
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমি ছাত্রলীগের একচেটিয়া প্রভাব দেখেছি, কিন্তু কোনো কার্যকর ছাত্রসংসদ দেখিনি। যদিও প্রতিবছর আমাদের কাছ থেকে ছাত্রসংসদ ফি নেওয়া হয়।
ক্যাম্পাসে দ্রুত সমস্যার সমাধান, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির অবসান এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো আদায়ের জন্য ছাত্রসংসদ অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম হতে পারে, যেখানে তারা তাদের দাবি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারে।
আরও পড়ুন: যেমন ছিল ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সাল
পাশাপাশি, এটি প্রশাসনিক কাঠামো বজায় রাখতে এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আরও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই নতুন বছরে আমি একটি কার্যকর ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আশাবাদী। এটি কেবল শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায়ই নয়, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আব্দুল্লাহ আল মাহিদ, অ্যাগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ