০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২২

ফ্যাটি লিভার চিকিৎসায় বশেমুরবিপ্রবির উপ-উপাচার্যের বিশেষ সাফল্য

ড. মো. সোহেল হাসান  © সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান ও তার গবেষণা দল বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো ফ্যাটি লিভার ডিজিজের চিকিৎসায় বিশেষ সফলতা পেয়েছেন। 

দীর্ঘ ৫ বছরের প্রচেষ্ঠায় মলিকুলার লিপিডোমিক অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজিজ রিসার্চ ল্যাবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) এর চিকিৎসায় থেরাপিউটিকস আবিষ্কার করেন অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের গবেষণা দল।

সম্প্রতি তার এ-সংক্রান্ত মাইলফলক সৃষ্টিকারী গবেষণাপত্রটি ইংল্যান্ডের স্বনামধন্য জার্নাল ‘ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

যকৃত বা লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক মাত্রায় চর্বির উপস্থিতিকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার। যদি এর কারণ হিসেবে মদ্যপানের ইতিহাস না থাকে, তবে তাকে নন- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) বলা হয়। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। আর উন্নত দেশগুলোতে রীতিমত উদ্বেগ তৈরি করা এই রোগে প্রতি হাজারে অন্তত ৪৭ জন আক্রান্ত হচ্ছে। যেখানে নারীর তুলনায় পুরুষদের আক্রান্তের হার বেশি। এমন বাস্তবতায় ড. সোহেল হাসানের গবেষণা দলের সাফল্য স্বল্প খরচে ফ্যাটি লিভার ডিজিজের চিকিংসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এই রোগের চিকিৎসায় ভবিষ্যৎ উদ্ভাবনের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন: দুই বছরের অধিক সময় ধরে ট্রেজারারবিহীন হাবিপ্রবি

অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজশাহীবিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ড. হাসান জার্মানির রুহর-ইউনিভার্সিটি বেচুম থেকে তার পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। পরে চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিসিন অ্যান্ড হেলথে (জিআইবিএইচ)-এ পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ লাভ করেন। মলিকুলার সেল বায়োলজি, লিপিডোমিক্স ও মেটাবলিক ডিজিজ, প্রোটিন ইঞ্জিনিয়ারিং, টক্সিকোলজি এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মেকানিজম বিষয়ে সবমিলিয়ে তার ৫০টিরও বেশি প্রকাশনা রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মানসম্পন্ন জার্নাল নিবন্ধ, বইয়ের অধ্যায় ও কনফারেন্স পেপার উল্লেখ্য। অসামান্য কর্মস্পৃহায় তিনি বিভিন্ন পেশাদার প্রতিষ্ঠান ও মর্যাদাপূর্ণ জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। একজন পর্যালোচক ও অবদানকারী হিসেবে তিনি বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক কমিউনিটিতে নিজের অনন্যতা বজায় রেখে চলেছেন।

তাদের গবেষণাটি বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান বলেন, ‘আমরা অনেক খুশি এবং এক্সাইটেড। লিভারের একটি ডিজিজ বা ফ্যাটি লিভার নিয়ে আমরা যে গবেষণা করেছি তা ইংল্যান্ডের স্বনামধন্য জার্নাল ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন গ্রহণ করেছে। আমরা আরো গবেষণা করতে চাই। তাই সবার কাছে দোয়া চাই এবং সহযোগিতা চাই।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ফ্যাটি লিভার হলো তা থেকে লিভার সিরোসিস ক্যান্সার হয়, যা মৃত্যুর দিকে নিয়ে  যায়। এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল।  আমাদের এই গবেষণার থেরাপিউটিকস বাংলাদেশসহ পৃথিবীর মানুষের অনেক উপকারে আসবে।