শারীরিক প্রতিকূলতা দমাতে না পারলেও পদ্ধতির কাছে শেষ বায়েজিদের স্বপ্ন
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন অদম্য শক্তিতে এগিয়ে চলা শারীরিক প্রতিবন্ধী বায়েজিদ রহমান। প্রাথমিক ভর্তি সম্পন্ন করতে না পারায় এত দিনের লালিত স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় বায়েজিদের।
গত ১০ মে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে গুচ্ছ ‘সি ইউনিটের’ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪১ নম্বর পান বায়েজিদ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করেন। গত ২২ অক্টোবর বেলা পৌনে ৩টায় ফোনে এসএমএস আসে এবং সেখানে বলা হয়, ২৩ অক্টোবর দুপুর ১২টার মধ্যে ৫০০০ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি তার পরিবারের পক্ষে। ফলে ভর্তি বাতিল হয়ে যায় তার।
বায়েজিদ কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে সাহায্য চান এবং জানতে চান, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাকে হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে হয়। তিনি নিয়মিত ক্লাস করতে পারবেন না। এতে কোনো সমস্যা হবে কি না।’
এতে অনেকেই তাকে আশ্বস্ত করেন এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে তার বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। কিন্তু পদ্ধতির কারণে তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
বায়েজিদ রহমানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল সদরের কলেজপাড়ায়। পড়াশোনা করেছেন মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয়ে। তার বাবা মো. রোস্তম আলী পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পরপর দুই বছর হুইলচেয়ারে করে অংশ নেন বায়েজিদ রহমান। দুচোখ ভরা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তার এই জীবনযুদ্ধ।
গত ১০ মে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে ‘প্রতিকূলতা দমাতে পারেনি, দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে গুচ্ছের পরীক্ষায় বায়েজিদ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে তার বাবা মো. রোস্তম আলী জানান, তার ছেলেকে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা দেখেন না। তার ইচ্ছা ছেলে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক হবে। তিনি ছেলের এই ইচ্ছাশক্তিকে স্যালুট জানান।
সে সময় বায়েজিদ বলেছেন, ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে আমাকে আলাদা ভাবি না। সবার মতো নিজের পায়ে চলতে না পারলেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’
এখন ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় দিশেহারা বায়েজিদ ও তার পরিবার। তার বাবা মো. রোস্তম আলী বলেন, বর্তমানে বায়েজিদ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব, সেই ভাষা আমার জানা নেই।
বায়েজিদ বলেন, রেজাল্ট দেখার পর অনেক খুশি হইছিলাম। কারণ প্রথমবার হয়নি আমার। দ্বিতীয়বার মূলত জেদ থেকেই দেওয়া। এখন নিয়মের কাছে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি মনকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারতেছি না। আমি এখন কী করবো?
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা ভাইভা নিয়ে লিস্ট জিএসটির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। সঠিক সময়ে পেমেন্ট না করার কারণে সে সিস্টেম থেকে বাদ পড়েছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কোটার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।