৫ মাস পর ক্লাসে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা, সেশনজটে উদ্বেগ
দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আজ রোববার (২০ অক্টোবর) থেকে ক্লাসে ফিরছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গ্রীষ্মকালীন ছুটি, ঈদুল আজহার ছুটি ও টানা আন্দোলনের কারণে এ দীর্ঘ সময়ে তারা ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে পারেননি। তবে কয়েক মাসের সেশনজটে পড়ায় উদ্বেগে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আজ থেকে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে কিছু বিভাগে। তবে পুরোদমে ক্লাস-পরীক্ষা ২৫ অক্টোবরের পর শুরু হবে। ছেলেদের হলে তুলতে দেরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো বিভাগ চাইলে আজ থেকেই ক্লাস শুরু করতে পারবে।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে গত ৩ জুলাই থেকে নানান কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা পদ্ধতির সংস্কার যৌক্তিক পর্যায়ে না নিয়ে আসা পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।
এর আগে গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ২৪ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ২৮ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। ছুটি কাটিয়ে ২০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। পরবর্তীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইনে পাঠদান শুরু করেন শিক্ষকরা।
দীর্ঘদিন শ্রেণীকক্ষে ফিরতে না পারায় উদ্বেগে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে চার থেকে পাঁচ মাসের সেশনজটে পড়েছেন তারা। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পরবর্তী সেমিস্টারে সময় কমিয়ে নিয়ে গ্যাপ পূরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহবান তাদের।
এদিকে তিন দফা দাবিতে শিক্ষকরা গত ৯ মে মানববন্ধন, ১১ মে কালোব্যাজ ধারণ, ২৫-২৭ জুন ৩ দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। তবে তাদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন শাবিপ্রবি শিক্ষকরা। ফলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।
ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাবের বলেন, ৫ মাস পর আমরা ক্লাসে ফেরার সুযোগ পাচ্ছি ব্যাপারটা আনন্দের। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে আমাদের অনেক ক্ষতিও হয়েছে। পড়ালেখা থেকে অনেকটা বিমুখ হয়ে পড়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৩৬ দিন দেশব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের পতন হয়। এতে দেশব্যাপী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসিনা আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যরাও একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। পদত্যাগের হিড়িক পড়ে শাবিপ্রবিতেও। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রভোস্ট বডিসহ ৮৩ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা পদত্যাগপত্র জমা দেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদ শূন্য হওয়ায় অচলাবস্থা দেখা দেয় প্রতিষ্ঠানটিতে।
জানা গেছে, গ্রীষ্মকালীন ছুটি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চতুর্মুখী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শীর্ষস্থানীয় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে স্থবির রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে হতাশা আর অস্থিরতা দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
দীর্ঘদিন শ্রেণীকক্ষে ফিরতে না পারায় উদ্বেগে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে চার থেকে পাঁচ মাসের সেশনজটে পড়েছেন তারা। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পরবর্তী সেমিস্টারে সময় কমিয়ে নিয়ে গ্যাপ পূরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহবান তাদের।
আরো পড়ুন: ঢাবির বিশেষ মাইগ্রেশনের আবেদন আজ থেকে, বেড়েছে শূন্য আসন
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. কাইয়ুম বলেন, আমরা প্রায় এক সেমিস্টার সেশনজটে পড়ে গিয়েছি। এখান থেকে উত্তরণ করাটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো, যেন অন্যান্য ছুটি কমিয়ে দ্রুত সেশনজটের গ্যাপটা পূরণ করার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আবাসিক হল গুলোতেও বেড়েছিল নিরাপত্তার শঙ্কা। কবে ফিরে পাবে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তা নিয়েও প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবশেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ হলেও ছেলেদের আবাসিক হল সমস্যায় ক্লাস-পরীক্ষা প্রায় এক মাসেও চালু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ২০ অক্টোবর থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ পাঁচ মাসে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ক্লাসে ফিরলেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা।