পাবিপ্রবিতে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এলেক্স ওয়েব এর সাথে মতবিনিময় সভা করেন (পাবিপ্রবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম আবদুল আওয়াল।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে দুই অধ্যাপকের মধ্যে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে এগারোটায় উপাচার্য নিজ কার্যালয়ে মতবিনিময় সভার আলোচ্যবিষয় সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
এসময় উপাচার্য বলেন, ‘আমি অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কেমব্রিজ অধ্যাপক এলেক্স ওয়েবের সাথে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছি এবং সে এর বিস্তারিত উত্তর দিয়েছে।’
পাবিপ্রবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পেতে পারে সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘বিশ্বের যে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোতে খুব মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনার সুযোগ পান। খুব মেধাবী এবং এক্সট্রা অর্ডিনারি শিক্ষার্থী না হলে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পাওয়া কঠিন। এই জায়গাগুলোতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের হার খুবই কম। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির প্রক্রিয়া থেকে আলাদা।
এখানে একজন শিক্ষার্থীর অনেক কিছু যাচাই বাছাই করে তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে যারা বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসতে চায় তারা যেন বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় সেটা চীনের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে, যুক্তরাজ্য্যের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে কিংবা বিশ্বের শীর্ষ যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে তারা যেন তাদের স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করে নেয়। এরপর তারা বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডির জন্য আবেদন করলে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সহজ হবে।’
যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যদি উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে সমযোতা করতে চায় তাহলে করণীয় কি হবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘তোমার বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বাংলাদেশের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় যদি যুক্তরাজ্যের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার বিষয়ে সমযোতা করতে চায় তাহলে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপ-উপাচার্যের (ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স) সাথে যোগাযোগ করলে তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতের সাথে কীভাবে সমযোতা করতে হবে তার বিস্তারিত গাইডলাইন জানিয়ে দিবে। এরপর গাইডলাইন অনুযায়ী তোমরা ওদের সাথে সমযোতা করবে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমযোতায় যেতে পারলে তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপ পাওয়া, গবেষণার সুযোগ পাওয়ার কাজটা সহজ হয়ে যাবে।’
যুক্তরাজ্য কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার জন্য ফান্ডিং পাওয়ার বিষয়ে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘তোমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকার থেকে গবেষণার জন্য খুব অল্প টাকা পায়। সেক্ষেত্রে বাইরের দেশ থেকে তোমাদেরকে ফান্ডিং নিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে গবেষণার জন্য অনেক টাকা পেত। কিন্তু বেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য টাকা কমিয়ে দেয়।
আর এই সুযোগ কাজে লাগান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু দেশ। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করেন। সেজন্য তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং তোমাদের সরকার যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাজ্যের সাথে সঠিক পন্থায় যোগাযোগ করতে পারে তাহলে তোমরাও ফান্ড পাবে।
আরও পড়ুন: ক্যাম্পাস থেকে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে হাবিপ্রবিতে মানববন্ধন
এছাড়াও যুক্তরাজ্যে বিবিআরসি নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ফান্ড দেয়। ব্রাজিল এবং ভারত এই প্রতিষ্ঠানের সাথে সমযোতা করে গবেষণার জন্য অনেক ফান্ড পাচ্ছে। তাই তোমরাও এদের সাথে যোগাযোগ করতে পারো। যদি এদের সাথে সমযোতা করতে পারো তাহলে তোমার বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তোমার দেশের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় এদের থেকে ফান্ড পেতে পারে।’
বাংলাদেশকে গবেষণাখাতে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় সেই প্রশ্নের জবাবে এলেক্স ওয়েব বলেন, ‘আমি চিলির বিপ্লবের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিপ্লবের একটা মিল খুঁজে পেয়েছি। চিলি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গবেষণায় এগিয়ে গেছে। সে জন্য তোমরাও চিলি কীভাবে শিক্ষা ও গবেষণায় দ্রুত এগিয়ে গেছে তা খুঁজে দেখতে পারো এবং ওদের ভালো দিকগুলো নিয়ে কাজ করলে তোমরাও গবেষণায় খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমার মনে হচ্ছে।’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলোর বাইরেও এলেক্স ওয়েব অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সে আমাদের নতুন বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন এবং নতুন বাংলাদেশে ভালো কিছু হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।