শাবিপ্রবিতে হামলায় আসামি আন্দোলনকারীরা, সাক্ষী জানেন না কিছুই

 শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী ফয়সাল হোসেন নিজেও সে ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান। 

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর)  সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে মো. কামাল পারভেজ নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী শাহেদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে নির্দেশনা দিয়েছে।’ 

মামলার এজাহারে উল্লিখিত অনেক শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘মামলায় কিছু নিরপরাধ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামও রয়েছে। তাদের নাম সংযুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা।’

এদিকে মামলার অভিযোগপত্রে দুই নাম্বার সাক্ষী হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সে ব্যাপারে ফয়সাল কিছুই জানেননা বলে জানিয়েছেন তিনি। ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘আমাকে দ্বিতীয় সাক্ষী করে যে মামলা করা হয়েছে, এ সম্পর্কে আমি অবগত নই। তা নিয়ে যা করা প্রয়োজন, আইনি প্রক্রিয়ায় তা আমি করব'।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে, যারা ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা নেই। নিজেদেরকে নিরাপদ বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে আইনজীবী শাহেদ আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি জানান , কয়েকজন আমাকে জানিয়েছে যে তাদেরকে বিনা অপরাধে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এটি নিয়ে অধীক তদন্তের জন্য কাজ করব। নির্দোষ কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবে না বলেও জানান তিনি।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত নয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে আগ্নেয়াস্ত্রসহ মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে ‘হামলা’ করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সজীবুর রহমান এবং অন্যান্য কয়েকজন নেতাসহ ৩১ জন শিক্ষার্থী এবং ৮ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ সর্বমোট ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মামলার বাদীর ভাতিজা মারুফসহ অনেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হন। আসামীরা আহতদের মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে তারা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হামলায় মারুফ আহমেদের একটি চোখ চিরতরে অকেজো হয়ে গেছে বলে মামলাল এজাহারে উল্লেখ করা হয়। 

আরও পড়ুন: যবিপ্রবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ

মামলায় উল্লিখিত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় ছিল তাদের নামও আসামীর তালিকায় রয়েছে।  এতে প্রতিবাদ করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাবির বলেন,‘এ মামলাটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল তাদের কয়েকজনের নামও সংযুক্ত করা হয়েছে মামলায়। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সমন্বয়কদের কাজ করা প্রয়োজন বলেও তিনি জানান'।

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মামলা কারা করেছে আমরা জানি না। আমরা ইতিমধ্যে পিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, এটা সমাধানের জন্য কথা বলবো।’ যারা শিক্ষার্থীদেরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান তিনি। 


সর্বশেষ সংবাদ