ছাত্রলীগের নির্যাতনের মুখে দেড় বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরলেন পাবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ছাত্র লীগের নির্মম নিপীড়ন ও নির্যাতনের ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালানো দুই শিক্ষার্থী দীর্ঘ দেড় বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন সাব্বির হোসেন সাওন ও সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ। তারা দুইজনেই নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল। ঐ দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে স্বাধীনতা চত্বরের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় কতিপয় ছাত্রলীগ নেতারা ‘ক্যাম্পাসে শিবির ধরেছি, শিবির ধরেছি’ বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করলে হল থেকে দেশিও অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা মারতে আসলে শিক্ষার্থীরা ভয়ে পালিয়ে যান।
এ সময় শিবির সন্দেহে ৩ জন কে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন। তারা হলেন গোলাম রহমান জয় (লোকপ্রশাসন বিভাগ) আসাদুল ইসলাম (ইংরেজি বিভাগ) ও আব্দুল আজিজ (ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)।
তাদের কে জোর করে শিবির ট্যাগ দিয়ে হলের রুমে আটক রেখে হাত পা বেঁধে ঘন্টাব্যপি নির্মম পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। মারধরের পর এক পর্যায়ে তাদের কে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তদন্ত করে শিবিরের সাথে জড়িত থাকার কোন আলামত না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেন।
ঐ রাতে ঘটনাস্থল থেকে শাওন ও সাইফুল্লাহ দুইজনেই ছাত্রলীগের ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে মেসে গিয়ে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দুইজনকে খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। পরদিন শাওন বাসা যাওয়ার পথে পাবনা বাস টার্মিনালে আটক করে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে। এমনকি ছাত্রলীগ তার সাথে এমন কোন কিছুই করেন নি বলে নিজের ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দিতে বাধ্য করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেন।
নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে বছর পেরিয়ে গেলেও ক্যাম্পাসে আসেননি এই দুই শিক্ষার্থী।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ আল মাহমুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কে বলেন, ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল আমি ও আমার বন্ধু শাওন আমরা যে মেসে থাকতাম সেখান থেকে সকালে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ মন্দিরপুর মসজিদের সামনে ২ টা বাইক এসে হাজির।
সেখানে ছাত্রলীগের শেহজাদ (ব্যবসায় প্রশাসন ১০ম ব্যাচ), আপেল (গণিত ১০ম ব্যাচ), হৃদয় (ব্যবসায় প্রশাসন ১০ম ব্যাচ) পিয়াস (অর্থনীতি ১০ম ব্যাচ), ছিলেন। তারা এসে আমাদের ফোনগুলো কেড়ে নিয়ে চেক করে এবং উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে। আমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু আমাদের সাথে মেহেদি ভাই থাকায় তারা সেটা কোনোভাবে পারে নাই।
ভুক্তভোগী মাহমুদ বলেন, কিছুদূর গেলে আবার আমাদের পিছু নিতে থাকে। একটা পর্যায়ে তারা আবার মাসুম বাজারের একটু পিছনে আবার বাইক থামায়। আমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু বাজারে অনেক লোক থাকায় তা পারে নি। তারা ঘুরে চলে যায় এরপর আমি অনেক কষ্ট করে বাড়ি চলে যাই।
তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে আমার বন্ধুর কাছ থেকে আমার আব্বার নাম্বার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আমার নাম ধরে হুমকি দেয়। আর আমার আম্মা এগুলো শুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে পরবর্তীতে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলে মাইনর অ্যাটাক হয়েছে। পরবর্তীতে রোজার ঈদের পর ক্যাম্পাসে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমার পিছনে কিছু ছেলে আমাকে ধরার চেষ্টা করে। তারা সবাই মুখে রুমাল বেধে রেখেছিল যার কারণে তাদের নাম বলতে পারছি না। এর পর থেকে আর ক্যাম্পাস আসাও হয়নি সিটি পরীক্ষা দেওয়া হয়ে উঠে নি।
এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি করে মাহমুদ বলেন, এর পাবনায় আসলেও ১ বছরেরও বেশি সময় ক্যাম্পাসে আসতে পারি নি। শাওন ঐ ঘটনার পর বাসা চলে গিয়েছিল আর কখনো ব্যাক করেনি। দীর্ঘ দেড় বছর পর তার সাথে ক্যাম্পাসে দেখা হলো। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে এই ঘটনার সাথে জড়িত সকল সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় সম্ভব হয় নি।