০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৪

দীর্ঘ ১০০ দিনেও শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারেনি শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গ্রীষ্মকালীন ছুটি, ঈদুল আজহার ছুটি ও চতুর্মুখী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ ১০০ দিনেও পাঠদানে ফিরতে পারেনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার মো. ফজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ২৪ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে ২০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইনে পাঠদান শুরু করেন শিক্ষকরা। 

এদিকে, ৩ দফা দাবিতে শিক্ষকরা গত ৯ মে মানববন্ধন, ১১ মে কালোব্যাজ ধারণ, ২৫-২৭ জুন ৩ দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি সহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করে আসলেও শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন শাবিপ্রবি শিক্ষকরা। ফলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। 

পরবর্তীতে দেশব্যাপী কোটা সংস্থার আন্দোলনে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' সাথে একাত্মতা পোষণ করে গত ৩ জুলাই থেকে নানান কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা পদ্ধতিকে যৌক্তিক পর্যায়ে না নিয়ে আসা পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলেও ঘোষণা দেন তারা।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৩৬ দিন দেশব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে দীর্ঘ ১৫ বছরের হাসিনা আমলের পতন হয়। এতে দেশব্যাপী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসিনা আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যরাও একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। পদত্যাগের হিড়িকে শাবিপ্রবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রভোস্ট বডি সহ পদত্যাগপত্র জমা দেন তারাও। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদের পদত্যাগের ফলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি।

ফলে দীর্ঘদিন যাবত স্থবির রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এতে হতাশা আর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। দীর্ঘদিন শ্রেণীকক্ষে ফিরতে না পারায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে দিনদিন আবাসিক হল গুলোতেও বাড়ছে নিরাপত্তার শঙ্কা। কবে ফিরে পাবে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তা নিয়েও প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গ্রীষ্মকালীন  ছুটি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চতুর্মুখী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ ১০০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

কবে ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাবিপ্রবির নতুন প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক বলেন, ডিনদের এক জরুরি মিটিংয়ে আমাকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালন করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আজ আমরা সকল ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে মিটিং ডেকেছি। সেখানে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ক্লাস কার্যক্রম এবং হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই দায়িত্ব পালনে ডিনরা সহযোগিতা করবে। আশা করছি দ্রুতই আমরা ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।