বন্যার্তদের সহায়তায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা, বুটেক্স শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন সরকারি হস্তক্ষেপ
বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণের জন্য গত শনিবার ফেনীতে যায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) একদল শিক্ষার্থী। পরদিন ত্রাণ বিতরণ শেষে ঢাকায় ফেরার সময় তাদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গৌরিপুরে ট্রাক্টরের সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা শিকার হয়। এতে গুরুতর আহত হয় ২ জন শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই বুটেক্সের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
আহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল লাবিব ও সাজ্জাদ আল মামুনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আব্দুল্লাহ আল লাবিবের অবস্থা খারাপ দেখে তাকে কুমিল্লার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে হেলিকপ্টার করে ঢাকা সিএমএইচ এ পাঠায়।
জানা যায়, দুর্ঘটনার কারণে তার ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো (ব্রেইন, ফুসফুস, বক্ষপিঞ্জর, মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড, অন্ডকোষ) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লাবিবের শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল লাবিব স্কুল পড়ুয়া অবস্থায় ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল। তাছাড়া চলতি বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও লাবিব শুরু থেকে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল। যখন আন্দোলনটা শুধু কোটা আন্দোলনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল তখন থেকেই লাবিব নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলন করতো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বুটেক্সের সমন্বয় প্যানেলের একজন ছিল লাবিব। পাশাপাশি বুটেক্সের জোন প্রথা ও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং বুটেক্সকে সংস্কার করার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল তাতেও লাবিবের সক্রিয় ভূমিকা এবং অংশগ্রহণ ছিল।
তাকে নিয়ে বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বুটেক্সের পক্ষ থেকে ত্রাণ তহবিল শুরু করার কথা উদ্যোগ নেয় লাবিব। সে তার বন্ধুদের নিয়ে পুরো তেজগাঁও এলাকায় মানুষের কাছে গিয়ে ত্রাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করেছিল। বন্যায় দুর্গত এলাকার মানুষদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, লাবিব ছেলেটা আমাদের দেশ ও জাতির সম্পদ। লাবিব একজন সাধারণ মানুষ না, সে একজন স্বপ্নবাজ মানুষ যে দেশকে বদলের স্বপ্ন দেখে। দেশের মানুষের ভালোর জন্য যে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দিতেও পিছপা হবে না। মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে তার জীবনটা আজ হুমকির মুখে। এই ছেলেটার যে দেশপ্রেম দেখেছি, যে সাহস দেখেছি এমনটা আমরা আর কারো মাঝে দেখিনি।
শিক্ষার্থীদের দাবি, লাবিবের এই দুর্দিনে যেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনুস তার পাশে দাঁড়ায় এবং লাবিবের চিকিৎসাভার রাষ্ট্র বহন করে এবং তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
শিক্ষার্থীদের মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা আহত হয়েছিল তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা তো রাষ্ট্র বিনামূল্যে করে দিয়েছিল, লাবিবও তো সে আন্দোলনের একজন ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা; একজন সমন্বয়ক। দেশের এমন একজন সম্পদের জন্য যদি রাষ্ট্র কিছু করা প্রয়োজন।