দাবি আদায়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাচ্ছে নোবিপ্রবি
অর্থমন্ত্রনালয়ের সর্বজনীন পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন বাতিলের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি এবং দাবি মেনে না নিলে ৭ জুলাই থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবে কর্মকর্তারাও। একাডেমিক এবং অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আরেকটি নতুন সেশনজটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নোবিপ্রবি। তবে আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট জট পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস শিক্ষক সমিতির।
সারা বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে থমকে যায় পুরো পৃথিবী। পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থা ও। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও পারেনি বাংলাদেশের মতো দেশগুলো। যার ফলে ১ বছরের মতো সেশনজটে পড়ে নোবিপ্রবিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়াও বিভিন্ন আন্দোলন, তাপদাহের বন্ধ, ঘুর্ণিঝড় সহ আরো কিছু কারণে একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয়।
চলমান অনির্দিষ্টকালের ক্লাসসহ সংশ্লিষ্ট একাডেমিক কার্যক্রম এবং দাপ্তরিক কাজগুলো বন্ধ থাকলে ব্যাঘাত ঘটবে পড়াশোনায় সাথে রয়েছে সেশন জট ও চাকরির পরীক্ষায় বিলম্বজনিত নানা সমস্যা। এরকম নানা বিষয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের সর্বাত্মক এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা তাদের নানাবিধ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
ভোগান্তির বিষয়ে নোবিপ্রবির ফার্মেসি ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম নাবিলা বলেন, এভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকলে সেশন জট তৈরি হবে। এর ফলে ভোগান্তি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও শিক্ষকরা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা পাবে। আশা করছি শিক্ষকদের এই দাবি সরকার দ্রুত মেনে নেবে এবং শিক্ষক- শিক্ষার্থী সবাইকে দ্রুত ক্লাসে ফেরার সুযোগ করে দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সায়মা জাহান ঈশিতা জানান, অনির্দিষ্টকালের বন্ধের কারণে আমাদের লেখাপড়ায় অনিশ্চিয়তা দেখা দিচ্ছে। আমরা যারা এখনও অনার্স শেষ করতে পারি নি আমাদের জন্য আরও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্লাস, সিটি না হলে আমরা আরো পিছিয়ে যাবো। সকল যৌক্তিক দিক ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চলমান সমস্যার সময়োপযোগী সমাধান করে যাতে খুব দ্রুত আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা পোষণ করে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন: শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সাথে শিক্ষার্থীরা জড়িত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের সকল ধরনের ক্লাস -পরীক্ষা বর্জনের ফলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে পারে এবং বিশেষ করে যাদের শেষ বর্ষ /৮ম সেমিষ্টার চলমান তারা খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। আগামী নভেম্বরে বিসিএস সার্কুলার এবং বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার সার্কুলার আসবে, ফলে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেনা। এদিক থেকেও ১ বছর পিছিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।সরকারের উচিত এসব বিষয় বিবেচনা করে একটা শিক্ষকবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়া।
শিক্ষকদের দাবি অবশ্যই যৌক্তিকতা স্বীকার করে ফার্মেসি ১৬তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী আয়ান ভৌমিক বলেন, শিক্ষকতা পেশায় মেধাতন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য অবশ্যই শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দেয়া উচিত। কিন্তু পাশাপাশি আমি এটাও বিশ্বাস করি যে শিক্ষকতা পেশা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ন সেবাদানকারী পেশা। এই ধরণের পেশাগুলোর (যেমন শিক্ষক, ডাক্তার) কর্মবিরতিতে যাওয়া অনেক বিরূপ কিছু প্রভাব ডেকে আনতে পারে।
আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের মানুষগুলো শিক্ষকদের দাবিগুলো শীঘ্রই বিবেচনায় নেবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন যাতে আমরা দ্রুতই স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফেরত যেতে পারি।
আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এক বিজ্ঞপ্তিতে ৪০ ভুল
চলমান কর্মবিরতির বিষয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবিগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলে অতিদ্রুত সমাধান করবে বলে আমরা আশাবাদী। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কবলে পড়ুক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আমাদের আন্দোলন শেষ হওয়া মাত্রই ক্লাসে ফিরব। আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বল্পকালীন ক্ষতি বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে পুষিয়ে দিব।’
উল্লেখ্য যে, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিতে ১লা জুলাই (সোমবার) থেকে সর্বাত্নক কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়াও ১লা জুলাই থেকে ৪ঠা জুলাই পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন কর্মকর্তা সমিতি এবং ৭ জুলাই থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।