২০ জুন ২০২৪, ০৯:০৭

ক্যাম্পাসে ফিরতে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে আবারও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হওয়ায় ঈদ আনন্দ ভুলে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে যাচ্ছে সিলেটের লাখ লাখ গৃহবন্দী মানুষ। সুরমার নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় পাহাড়ি ঢলে নদীগুলো টইটুম্বুর হয়ে ফুলে উঠেছে হাওর। রাতের মুষলধারে বৃষ্টির ভয়ে বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে মানুষের। 

সিলেটের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি প্রধান সড়কেও পানি রয়েছে। এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ভারী বর্ষণের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছ। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা চিন্তা করে ক্যাম্পাসে ফিরতে শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় আহসান বলেন, আমরা হাওর পাড়ের মানুষ, সিলেট সুনামগঞ্জ বন্যায় প্লাবিত। এমনকি রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। এছাড়া অধিকাংশ বাসায় পানি, এমতাবস্থায় পরিবারকে বন্যার হুমকিতে রেখে ক্লাস, পরীক্ষা দেওয়া আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি বাড়ানোর জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইহসান প্রান্ত বলেন, ২৩ তারিখ থেকে অনেক ডিপার্টমেন্টে পরীক্ষা শুরু হবে। অনেকেই আজ বা কাল সিলেট আসবে। সিলেটের বর্তমান যে অবস্থা তা খুবই ভয়াবহ এবং অনিশ্চিত। বিশেষ করে সিলেট টু সুনামগঞ্জ রোড বন্ধ। অনেকের বাসা সুনামগঞ্জ। দূর থেকে যে মেয়েগুলো আসবে তাদের সিকিউরিটি দেবে কে?

ইহসান প্রান্ত বলেন, বৃষ্টির পূর্বাভাস আরও ১০ দিন পর্যন্ত রয়েছে। এতে বন্যার অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে। সিলেটের এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা ডিসিশান দিলে সবার জন্য সেটা অনেক উপকার হতো। যারা দূর থেকে এসে আটকা পড়বে তারা কোথায় উঠবে বা কোনো বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে কী ঘটবে তা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। 

সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ২৩ তারিখের পরে অনেক ডিপার্টমেন্টের সেমিস্টার ফাইনাল, ল্যাব ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। আবার কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টের হয়তো ক্লাসও শুরু হবে। সিলেটের ওয়েদার অলরেডি ভয়াবহ। অনেক মানুষ কষ্টে আছে। অনেক জায়গায় হাঁটু পানি।

এ শিক্ষার্থী বলেন, এখন এমন সময়ে অনেক স্টুডেন্ট যদি সিলেট আসেও, আসার পরে যদি অবস্থা আরও ভয়াবহ হয় তাহলে সব দিক থেকে ঝামেলায় পড়ব আমরা শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে অনেক দূর থেকে যারা আসবেন তারাও বিপদে পড়বেন। এছাড়া ২৩ তারিখ কেউ যদি কুষ্টিয়া, খুলনা এসে শুনে ২৫ তারিখ ভার্সিটি বন্ধ দিয়ে দেবে তাহলে আসলে তার কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। তাই এ বিষয়ে আগেই কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করবো।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানিয়া ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ। আমার গ্রামের অনেকের ঘরে পানি। গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট থেকে গ্রামে আসার দুইটা রাস্তাই ডুবে আছে। পানি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার ক্যাম্পাসে ফেরা প্রায় অনিশ্চিত।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় পরিস্থিতি ভালো। তাই আগের শিডিউল অনুযায়ীই ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।

এর আগে, ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপলক্ষ্যে গত ২৬ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও ২১, ২২ তারিখ শুক্রবার, শনিবার হওয়ায় ২৩ তারিখ রবিবার থেকে যথারীতি অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে আগে থেকে নির্দেশনা রয়েছে।