সামান্য ঝোড়ো বাতাসেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ছে পবিপ্রবি, ভোগান্তি
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামান্য ঝোড়ো বাতাসেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। প্রশাসনের উদাসীনতায় এ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাসে জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকলেও সেটারও হচ্ছে না যথাযথ ব্যবহার।
সর্বশেষ গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় রেমাল পটুয়াখালী জেলাসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় আঘাত হানে। অথচ পবিপ্রবি ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ রোববার রাত থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎহীন পবিপ্রবি ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলো। ঘূর্ণিঝড় রেমালের চারদিন পেরোলেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সরবরাহ।
শিক্ষার্থীরা জানান, পবিপ্রবিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর রয়েছে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলোতে জেনারেটরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না। অথচ প্রতিটি শিক্ষার্থী জেনারেটর বিল বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করছেন। ফি দিলেও বছরের পর বছর শিক্ষার্থীরা জেনারেটরের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
দুর্যোগ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, গোসল, খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছুতেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আবাসিক হলগুলোতে দেখা দিয়েছিল পানি ও খাদ্য সংকট। এমনকি ছিল না কোনো আলোর ব্যবস্থাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর থাকার পরও কেন অন্ধকারে থাকতে হয়েছে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা জায়, ক্যাম্পাসে যে জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে তা এ বিশ্ববিদ্যালয় যখন কৃষি কলেজ ছিল সে আমলের। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ক্যাম্পাসটিতে আর নতুন কোনো জেনারেটর স্থাপন করা হয়নি। ফলে নামেমাত্র এ জেনারেটর পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, রবিবার রাত আনুমানিক ২টার পর থেকে হলে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গোসল এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অনেকে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেয়েছেন। এমন ভয়াবহ দুর্যোগে যখন সারাদেশ জুড়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, সেখানে পবিপ্রবি প্রশাসন ছিলেন নীরব দর্শকের মতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুব আলম জয় বলেন, আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিদ্যুৎ না থাকায় খাওয়া-দাওয়া ও পড়ালেখা থেকে শুরু সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তো একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল। সামান্য একটু বাতাস বা বৃষ্টিতেই পুরো ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এই ক্যাম্পাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিদ্যুতের লাইনগুলোর সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
ক্যাম্পাসে লোডশেডিংয়ের সময় হলে হলে নিজস্ব জেনারেটরের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ টাকা জেনারেটরের ফি দেওয়া পরও আমরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিদ্যুৎ না থাকায় বাথরুমে পানি নেই, শিক্ষার্থীরা সারারাত অন্ধকারে ছিলেন। আমাদের ফি দিতে একদিন দেরি হলে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয় না। কিন্তু দুইদিন ধরে জেনারেটর চালানো হচ্ছে না, অনেক অনুষদের পরীক্ষা চলছে। জেনারেটর না চললে ফি নেওয়া বন্ধ করা হোক।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস শরীফ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে যারা রয়েছেন এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বললে ভালো হবে। জেনারেটর পরিচালনার জন্য একটা কমিটি রয়েছে। তারা জেনারেটরের সকল কিছু পরিচালনা করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. সন্তোষ কুমার বসু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জেনারেটরের প্রয়োজনীয় মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন ১১-কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর কেনার জন্য টেন্ডার করা হয়েছে।