সেশনজট নেই শাবিপ্রবির পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, চাকরির বাজারও উজ্জ্বল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ২৭টি বিভাগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন পরিকল্পনা অনুসারে ৬টি অনুষদের অধীনে আরও একাধিক বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে দুটি ইন্সটিটিউট রয়েছে। ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের অধীনে সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে।
আজ আমরা জানবো বিশ্ববিদ্যালয়টির পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে। বিভাগটিতে কী পড়ানো হয়, পড়াশোনা শেষে চাকরির বাজারে কেমন চাহিদা রয়েছে, শাবিপ্রবিতে বিষয়টির পাঠদান প্রক্রিয়া কেমন— জানবো পুরো বিষয়।
পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং কী: ভূ-অভ্যন্তরস্থ রিজার্ভার থেকে তেল-গ্যাস এক্সপ্লোর করা ও উত্তোলন করার যাবতীয় কার্যক্রম পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাঝে পড়ে।
মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং কী: কয়লা, পাথর থেকে শুরু করে সব ধরনের মিনারেল- যেসব মাটির নিচে পাওয়া যায় এগুলো শনাক্ত করা, উঠানোর পদ্ধতি নির্ধারণ করা, ফাইনালি বের করে আনা- এসব বিষয় নিয়ে পড়াশোনাই হলো মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং।
বাংলাদেশে পিএমই-এর ইতিহাস: বাংলাদেশে প্রথম গ্যাসফিল্ড আবিষ্কৃত হয় ১৯৫৫ সালে। ১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত হয় প্রথম কয়লাখনি। কিন্তু, এই সেক্টরে উচ্চশিক্ষা শুরু হয় সর্বপ্রথম বুয়েটে ১৯৯৫ সালে “পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেল রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং”-এ মাস্টার্স কোর্সের মাধ্যমে। ২০০৫ সাল থেকে শাবিপ্রবি-তে আন্ডারগ্রাজুয়েট (২০০৪-০৫ সেশন) লেভেলে যাত্রা শুরু করে “পেট্রোলিয়াম এন্ড জিও-রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং”। পরবর্তীতে এর নাম হয় “পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং”।
২০০৯ সালে যবিপ্রবি, ২০১০ সালে চুয়েট এবং ২০১৬ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে এই সাবজেক্ট পড়ানো শুরু হয়। শাবিপ্রবিতে পিএমই ডিপার্টমেন্ট বিএসসি (ইঞ্জি.) ডিগ্রি অফার করে। শাবিপ্রবি পিএমই-র ১৫টি ব্যাচ অদ্যাবধি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সাস্ট পিএমই-র ১৯তম ব্যাচ কন্টিনিউ করছে। সাস্ট পিএমই মাস্টার্স কোর্সও অফার করে থাকে।
শাবিপ্রবির পিএমইতে কী কী পড়ানো হয়: আর্থ সিস্টেম সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং কেমিস্ট্রি (থিওরি ও ল্যাব), ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, ফিজিক্স, ক্যালকুলাস, ভেক্টর ক্যালকুলাস, ডিফারেনশিয়াল ইক্যুয়েশন, পেট্রোলজি ও স্ট্র্যাটিগ্রাফি (থিওরি ও ল্যাব), পাইথন (থিওরি ও ল্যাব), ইকোনমিক্স, সোশ্যিওলোজি, হিস্ট্রি অফ বাংলাদেশ, ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্স, মেকানিক্স অফ সলিড, ফ্লুইড মেকানিক্স (থিওরি ও ল্যাব), রক মেকানিক্স (থিওরি ও ল্যাব), সার্ভেয়িং কোর্স (থিওরি ও ল্যাব), ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং ল্যাব, লিনিয়ার এলজেবরা, নিউমেরিক্যাল এনালাইসিস, স্ট্রাকচারাল জিওলোজি, পেট্রোলিয়াম জিওলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং থার্মোডায়নামিক্স, হিট ট্রান্সফার (থিওরি ও ল্যাব), এক্সপ্লোরেশন জিওফিজিক্স, রিজার্ভার পেট্রোফিজিক্স (থিওরি ও ল্যাব), রিজার্ভার ফ্লুইড (থিওরি ও ল্যাব), ওয়েল লগিং (থিওরি ও ল্যাব), রিজার্ভার ইঞ্জিনিয়ারিং, ড্রিলিং (থিওরি ও ল্যাব), জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (থিওরি ও ল্যাব), সারফেস মাইনিং (থিওরি ও ল্যাব), আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং (থিওরি ও ল্যাব), পেট্রোলিয়াম প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, নেচারাল গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারিং, নেচারাল গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন, মিনারেল প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইন ভেন্টিলেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট, প্রোব্যাবিলিটি এন্ড স্ট্যাটিস্টিক্স। শাবিপ্রবির সকল ডিপার্টমেন্টের মতো পিএমইতেও কোনো প্রকার সেশনজট নেই।
পেট্রোলিয়াম: (৪র্থ বর্ষ) রিজার্ভার সিমুলেশন (থিওরি ও ল্যাব), রিজার্ভার ইঞ্জিনিয়ারিং– ২, পেট্রোলিয়াম প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং– ২, ওয়েল টেস্ট এনালাইসিস, ইন্টিগ্রেটেড রিজার্ভার মডেলিং (থিওরি ও ল্যাব), ড্রিলিং– ২, অয়েল রিকভারি, অয়েল গ্যাস প্রোপার্টি এভাল্যুয়েশন, ট্রান্সপোর্ট ফেনোমেনা, ওয়েল ডিজান এন্ড অপারেশন প্ল্যানিং, পেট্রোলিয়াম রিফাইনিং প্রসেস।
মাইনিং: (৪র্থ বর্ষ) এপ্লাইড রক মেকানিক্স (থিওরি ও ল্যাব), ব্লাস্টিং টেকনিক্স, মাইন ডিজাইন (থিওরি ও ল্যাব), মাইন ভেন্টিলেশন – ২, ওর ডিপোজিট এভাল্যুয়েশন, মাইন ড্রেইনেজ এন্ড ডিওয়াটারিং, এনভায়রনমেন্টাল এসপেক্টস অন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইন এক্সামিনেশন, হ্যাজার্ড এন্ড রিস্ক, মাইনিং এক্সপ্লোরেশন, জিআইএস এন্ড রিমোট সেন্সিং, মাইনিং অপারেশন, প্রোডাকশন এন্ড মেশিনারিজ।
ডিমান্ড: ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের টোটাল এনার্জি কনজাম্পশনের ৩১.২% আসে তেল উৎস থেকে, ২৭.২% আসে কয়লার উৎস থেকে, ২৪.৭% আসে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎস থেকে। অর্থাৎ, সর্বমোট ৮৩.১% এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকেই নির্বাহ করা হয়। বাকি ১৬.৯% এনার্জি সাপ্লাইয়ে হাইড্রোপাওয়ার, নিউক্লিয়ার, সোলার, উইন্ড ও অন্যান্য উৎসগুলো নিয়োজিত রয়েছে।
বিশ্বে এখনো কোনো সাস্টেইনেবল প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি, যেটা এনার্জি সাপ্লাইয়ে পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং সেক্টরকে রিপ্লেস করতে পারবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসফিল্ড ৩০টি। কয়লা খনি ৫টি। সাম্প্রতিক গ্যাসের রিজার্ভগুলো দেশীয় কোম্পানির দেশীয় ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা এক্সপ্লোর ও এক্সট্রাক্ট হচ্ছে। অন প্রোডাকশন কোল মাইনের পাশাপাশি বাংলাদেশে আছে মধ্যপাড়া হার্ড রক (গ্রানাইট) মাইন।
বাংলাদেশের কয়লাগুলোর মান বিটুমিনাস (অতি উৎকৃষ্ট), এবং বাংলাদেশে প্রাপ্ত গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ সর্বাধিক এবং সালফারের পরিমাণ সর্বনিম্ন। ওয়ার্ল্ড-এর সবচেয়ে হায়েস্ট পেয়িং জব পেট্রোলিয়াম আর মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অনেক বছর ধরেই নির্ধারিত। এই ফিল্ডে জবের সবচেয়ে মজার বিষয়টা হলো- মাসের অর্ধেক সময় ছুটি। অর্থাৎ ১৫ দিন ওয়ার্কিং ডে হলে ১৫ দিন ছুটি।
তবে, জব লোকেশনগুলো একটু রিমোট এলাকায় হয় সাধারণত। যেহেতু ওয়ার্ল্ডের বড় বড় নামকরা কোম্পানিগুলো পেট্রোলিয়াম আর মাইনিং ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত, তাই ক্যারিয়ার হিসেবে অনেক উজ্জ্বল কিছু করা সম্ভব। সিনোপেক, মেল, এক্সন মবিল, সাউডি আরামকো, বিপি, টোটাল, সেভরন-এর মতো জায়গায় ক্যারিয়ার তৈরির বিশাল সুযোগ আছে।
গেলেস্কোর এক্সট্রেটা, বিএইসপি বিলিটন, রিও টিনটো, চাইনা সেনহুয়া অ্যানার্জি এগুলো ওয়ার্ল্ড মাইনিং ইন্ডাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে; সেখানেও রয়েছে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, কয়লা, পাথরের অধিকাংশ রিজার্ভ পেট্রোবাংলা, বাপেক্স ও এদের অধীনে কিছু কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এদের সাথে চুক্তিবদ্ধ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি সেভরন, গেজপর্ম, কনকোফিলিক্স, এদের কার্যক্রম আছে। প্লামবারজারের মতো কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এসব ইন্ডাস্ট্রিতে পেট্রোলিয়াম অথবা মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ারের ভালো স্কোপ আছে। তা ছাড়া আমাদের সমুদ্রে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনাময় গ্যাস ব্লক। এগুলো উঠানোর জন্য প্রচুর প্রকৌশলী প্রয়োজন হবে।
পিএমই কাদের জন্য: পিএমই-র জব সেক্টর কখনোই হাতের নাগালে থাকে না। পিএমই-র হায়েস্ট পেইড ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে এবাভ এভারেজ কিছু হতে হবে। রেজাল্ট, স্কিল, নলেজ কোথাও না কোথাও, কিংবা সবখানে এগিয়ে থাকতে হবে। এনভায়রনমেন্ট, হেলথ এন্ড সেফটি, মেইন্টেন্যান্স ইত্যাদি পদে বিভিন্ন প্রাইভেট ও সরকারী রিফাইনারী কোম্পানী জব অফার করে।
লেখা থাকে মেকানিক্যাল/ কেমিক্যাল/ পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার চাচ্ছে। যোগ্যতা থাকলে ঠিকই সুযোগ পাওয়া যাবে। পিএমইতে তারা আসতে পারো, যারা আগে থেকে সিভিল, কেমিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, মেকানিক্যাল বা ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি প্যাশনেট ছিলে।
ফিজিক্স নাকি পিএমই, কেমিস্ট্রি নাকি পিএমই, স্ট্যাটিস্টিক্স নাকি পিএমই– এসব প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়ার কিছু থাকে না। কারণ, তুলনা হয় ইক্যুইভ্যালেন্ট টপিকের সাথে। পিওর সাবজেক্ট আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তুলনা করা যায় না। সর্বোপরি, পিএমই একঝাঁক দেশপ্রেমিকের জন্য, যারা ভবিষ্যতে খাড়া শিরদাঁড়া নিয়ে বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
উচ্চশিক্ষা: USA-এর নামকরা Texas A & M University, University of Texas at Austin, Stanford University, University of Tulsa, University of Oklahoma, Texas Tech University, Missouri University of Science and Technology ইত্যাদিতে পেট্রলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা হয়। এ ছাড়া Canada, Australia, Turkey, Saudi Arabia এসব দেশের টপ র্যাংকিংসহ অধিকাংশ ইউনিভার্সিটিগুলো পেট্রোলিয়ামের ওপর ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে থাকে। মাইনিং-এর জন্য বিখ্যাত ইউনিভার্সিটিগুলোও সব USA, Russia, China, Australia-তে।
এছাড়া উন্নত প্রায় সকল দেশেই মাইনিং নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হয়ে থাকে। ইঞ্জিনিয়ারিং মানেই হলো বইয়ের নলেজের চেয়ে প্র্যাকটিক্যাল নলেজকে প্রাধান্য দেওয়া। তাই এই ফিল্ডেও রয়েছে নিজেকে মেলে ধরার, ক্যারিয়ার করার বিশাল সুযোগ। শাবিপ্রবি পিএমইর এলামনাইরা এখন পর্যন্ত Earth & Environmental Science, Petroleum Engineering, Petroleum Geophysics, Georesource Engineering, Oil & Gas Enineering, Chemical & Petroleum Engineering, Data Science, Geophysics & Seismology, Chemical Technology, Civil Engineering, Chemistry/Material Science, Buisness Information & Tecnology Manage ment, Mining, Geology, Engineering Management, Environmental & Resource Management, Mechanical Engineering, International Management of Resource and Environment, Civil & Environmental Engineering, Hydro Science & Engineering, Buisness Analytics & Data Science, Waste Water and Environmental Engineering, Renewable Energy Engineering, Marine GeoScience, Photovoltaics Engineering Science সাবজেক্টের অধীনে Australia, Canada, Germany, Hungery, India, Malaysia, Norway, Poland, Thailand, USA, UK এর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেউ উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন ও করছেন। কেউ শিক্ষকতা করছেন।
সংগঠন: শাবিপ্রবির পিএমই বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে রয়েছে পিএমই এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও ট্রেজারার শিক্ষকদের থেকে হন, বাকি পোস্টগুলোতে চলতি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা থাকে। শাবিপ্রবিতে আছে পিএমই এলামনাই এসোসিয়েশন। চুয়েট পিএমই, যবিপ্রবি পিএমই-র নামকরা শিক্ষকরা সাস্ট পিএমই-র সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এই এসোসিয়েশনের সদস্য। এলামনাই এসোসিয়েশন বিভিন্ন সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড সেমিনার আয়োজন করে থাকে।
এছাড়াও সারাবিশ্বের পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট ও জিওলোজি স্টুডেন্টদের নিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠন সোসাইটি অফ পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার্স (এসপিই)। প্রতিটা স্টুডেন্ট নিজস্ব একাউন্টের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক, স্টুডেন্ট, ইঞ্জিনিয়াদের সাথে যুক্ত থাকতে পারে এবং তথ্য পেতে পারে। উল্লেখ্য যে, সাস্ট পিএমই-র সকল স্টুডেন্টদের SPE একাউন্ট সম্পূর্ণ ফ্রি যার স্পন্সর করে Chevron। এসপিই সাস্ট চ্যাপ্টারের আলাদা কমিটি আছে, যা প্রতি বছর ইনোভেটিভ বিভিন্ন প্রোগ্রামাদি এরেঞ্জ করে।
সাস্ট পিএমইর বিশেষত্ব: চতুর্থ বর্ষে শিক্ষার্থীরা বাছাই করতে পারে তারা পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে, নাকি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে। (যদিও সার্টিফিকেট পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়েই দেওয়া হবে)। ফার্স্ট ইয়ার শেষে সিলেটের জাফলং, লালাখালে জিওলোজিক্যাল ফরমেশন এবং গ্যাসফিল্ডে ড্রিলিং অপারেশন ও ট্রান্সমিশন সিস্টেম সরেজমিনে দেখতে নিয়ে যাওয়া হয় ৩ দিনের ফিল্ডট্যুরে। সেকেন্ড ইয়ার শেষে কাপ্তাই, কক্সবাজার ও সেইন্টমার্টিনে ফিল্ড ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয় ৭ দিনের জন্য। ৩য় বর্ষে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় “ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ”-এ এক মাসের জন্য প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়। চতুর্থ বর্ষের শেষে দিনাজপুরে বড়পুকুরিয়া কোল মাইন ও মধ্যপাড়া হার্ডরক (গ্রানাইট) মাইনে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাংলাদেশে পিএমই রিলেটেড কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ: বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী (বাপেক্স), বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি),বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (বিপিআই)।। [আরো অনেক আছে পেট্রোবাংলার অধীনে]
শিক্ষক ও অন্যান্য: শাবিপ্রবিতে বাংলাদেশে প্রথম পিএমই-র যাত্রা শুরু হওয়ায় আমাদের অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক শিক্ষকরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জিওলোজি, বুয়েট কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাস্ট কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পড়াশোনা করে পরবর্তীতে দেশে ও দেশের বাইরে পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে উচ্চশিক্ষা ও পিএইচডি করে এসেছেন।
তবে, পরবর্তীতে সাস্ট পিএমই থেকে গ্র্যাজুয়েটেডরা সাস্ট পিএমই-র শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরাও দেশের বাইরে থেকে অনেকে পিএইচডি করেছেন এবং করছেন। সাস্ট পিএমই-তে সর্বমোট ১৬ জন শিক্ষক রয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে ৪ জন শিক্ষাছুটিতে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। শিক্ষকরা শিক্ষাদানের পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমেও নিয়োজিত রয়েছেন।
সর্বশেষ কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া- স্রষ্টার পক্ষ থেকে অনেক বড় একটা দান। পড়াশোনা করে দেশের বাইরে চলে যাওয়া, কিংবা নিজে একটা বেটার প্লেসে থাকাই শুধুমাত্র শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। পড়াশোনার প্রতিটি চ্যাপ্টারে চ্যাপ্টারে নিজের দেশের জন্য কিছু করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী হওয়া উচিত। দেশের জন্য অবদান এমনি এমনি রাখা যায় না। দেশের জন্য অবদান সবাই রাখতে পারে না। তারাই রাখতে পারে, যারা আগে থেকে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করে রেখেছে, আমি যা-ই করি না কেন, দেশের উপকারে যেন কাজে লাগে। আগামীর নবীনদের প্রতি প্রত্যাশা- দেশের জন্য ভাবো। এই দেশের তোমাকে প্রয়োজন।
লেখক: শিক্ষার্থী, পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাবিপ্রবি