০১ মে ২০২৪, ১৮:২৯

দেড় মাস পর বুয়েটের অচলাবস্থা কাটছে

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  © বিবিসি

দীর্ঘ দেড় মাস পর একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে স্থগিত হওয়া টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা পুনরায় শুরুর তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শ্রেণি-প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছে।

ইতিমধ্যে আগামী ১১ মে থেকে সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এর আগে আগামী সপ্তাহে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হবে। এদিকে, আগামী ৬ জুনের মধ্যে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে বুয়েটে প্রশাসন।

গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটির আগে-পরের সব টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বর্জন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে, বাধ্য হয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় পূর্বনির্ধারিত বাকি সব টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও আন্দোলনের মুখে ২৯ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। 

এদিকে ঈদের আগে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে ছাত্রলীগের কঠোর অবস্থান দেখা গিয়েছিল। মৌলবাদী গোষ্ঠীর ‘কালো ছায়া’ থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে ৩১ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল ছাত্রলীগ। সমাবেশের পর বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। বুয়েটের ছাত্রলীগ-সমমনারা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছিলেন। কিন্তু ঈদের পর সরকার বা ছাত্রলীগের কোনো পর্যায় থেকে বুয়েটের বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের মধ্যে যেসব উদ্বেগ বা শঙ্কা রয়েছে, সেগুলোর নিরসন করে তাঁরা বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে চান। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার মধ্যে আছেন। ছাত্রলীগ চায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন থাকুক। সব মিলিয়ে ছাত্রলীগ বুয়েটের বিষয়ে সময় নিয়ে এগোচ্ছে।

এদিকে পরীক্ষা কার্যক্রমে ফিরলেও মূল দাবি থেকে সরছেন না শিক্ষার্থীরা। যেকোনো ধরনের ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান অনড় রয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলার জন্য আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাদের কাছে নাম চেয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক দিন ধরে এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্র্তৃপক্ষের জারি করা ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ কার্যক্রমে হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তার অনুলিপি পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বুয়েটের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের যে দাবি ছিল আমরা সেটিতেই অনড় রয়েছি। আমরা এ ইস্যুতে প্রায় সব শিক্ষার্থীই ঐক্যবদ্ধ। যত যা হয়ে যাক না কেন, আমরা আমাদের এ প্রাণের ক্যাম্পাসকে আবার আবরার ফাহাদের মৃত্যুপুরীতে পরিণত করতে দিতে পারি না।’

তবে ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি রয়েছে কিছু শিক্ষার্থীর। সামাজিকভাবে অবমাননা ও র‌্যাগিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া অভিযোগের তদন্ত, নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু ও ক্যাম্পাসে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মানববন্ধন করেছে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতিপ্রত্যাশী এসব শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বুয়েট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় তারা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা প্রায়ই অনলাইনে ও সরাসরিভাবে হেনস্তা-অপমানের শিকার হচ্ছেন। বুয়েট ক্যাম্পাসে হিযবুত তাহরীরের মতো মৌলবাদী সংগঠন যে সক্রিয় তার সত্যতা বুয়েটের সিসিটিভি ফুটেজ দেয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টি তদন্ত করে মৌলবাদী সংগঠনে জড়িতদের পরিচয় খুঁজে বের করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়ন করে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।

এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের (ডিএসডব্লিও) পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির পক্ষে এবং বিপক্ষে শিক্ষার্থীদের কথাও আমরা শুনব। লিখিত আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে আইনি প্রক্রিয়ায় কীভাবে যাওয়া যায় সেটি নিয়েও আলোচনা হবে। আর শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য সেশনজট নিরসনেও বিভাগীয় প্রধানরা কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি বুয়েটের অচলাবস্থা কেটে যাবে।’

২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের একটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্ররাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল।