সিভিলের পোলা মরছে, তোমরা কেন ক্লাস করবা না?— বলে শোকজ খেলেন চুয়েটের শিক্ষক!
বাসচাপায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের এ আন্দোলন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (হিসাববিজ্ঞান) ড. সুমন দে’র বিরুদ্ধে।
এরই প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে চুয়েট প্রশাসন। চুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—দ্বিতীয় বর্ষের (২১ ব্যাচ) পানি কৌশল বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধি শিক্ষককে মোবাইল ফোনে ক্লাস বর্জনের বিষয়টি অবগত করলে ওই শিক্ষক বলেন, সিভিলের পোলা মরছে, তোমরা কেন ক্লাস করবা না? তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।
এমন বিরূপ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রাথমিকভাবে ৯টি দাবি থাকলেও পরবর্তীতে এ মন্তব্যের প্রতিবাদে ১০ম দাবি যুক্ত হয়।
ওই দাবিতে বলা হয়—শিক্ষক সুমন দেকে জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে তাঁকে বহিষ্কার করতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের এমন মন্তব্যের বিপরীতে তাঁর ছবি সংগ্রহ করে তাতে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। এ ছাড়া তার প্রতীকী অবয়ব তৈরি করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বলেন, তার (অভিযুক্ত শিক্ষক) বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে অগ্রগতিতে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. খালেদ আরাফাত বলেন, শিক্ষক হিসেবে তাঁর এমন মন্তব্যে আমরা সকলেই ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছি। তার এই বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে সকল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, সোমবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে একটি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুইছাত্র নিহত হন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।