৬ ছাত্রের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
ছাত্ররাজনীতি মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ইস্যুর সঙ্গে জড়িত ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ রাহিম রাব্বীসহ ৬ জনকে দুপুর ২টার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কারের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে সংবাদ সম্মেলনে এই আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। 'এক, দুই, তিন চার ডিএসডাব্লিউ গদি ছাড়', আমি কে তুমিকে, আবরার, আবরার' 'বুয়েট বাঁচাও' ইত্যাদি স্লোগান ও প্লাকার্ড হাতে নিয়ে রিপোর্ট লেখা অবধি এ বিক্ষোভ চলমান রয়েছে।
ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ৬ দফার পরিবর্তিত দাবিসমূহ হলো:
১. বুয়েটের নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে আমরা আজ সকাল ৯ টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন ইমতিয়াজ রাব্বির হল বহিষ্কার ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হলেও বুয়েট থেকে তার স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয় নি। আমরা আজ দুপুর ২টার মধ্যে লিখিতভাবে ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী একাডেমিক বহিষ্কার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
২. একই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সাথে বুয়েটের বাকি যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের একাংশের নাম পরিচয় ছবি এবং ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলো- এ. এস. এম. আনাস ফেরদৌস (স্টুডেন্ট আইডি: 1818004), মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল (স্টুডেন্ট আইডি: 2106101), অনিরুদ্ধ মজুমদার (স্টুডেন্ট আইডি: 2106079), জাহিরুল ইসলাম ইমন (স্টুডেন্ট আইডি: 2112031) এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাত (স্টুডেন্ট আইডি: 2106126) কে বুয়েট থেকে স্থায়ী একাডেমিক এবং হল বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, তারা কেন-কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো এ ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
৪. স্টুডেন্টদের নিরাপত্তার জন্য "রাত ১০:৩০ টার পরে সকল ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ" এবং যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদেরকে রাত সাড়ে দশটার বেশি সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে সেক্ষেত্রে ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তর (ডিএসডাব্লিও) স্যারের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।
(ক) এক্ষেত্রে যদি বহিরাগতদের অনুমতি দেয়া নাই হয়ে থাকে, তাহলে ডিএসডাব্লিও স্যারের প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতরা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএসডাব্লিও স্যার নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ।
(খ) আর যদি বহিরাগতদের পারমিশন দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অফিসের প্রটোকল: ১১ অক্টোবর, ২০১৯ এ দেয়া ঘোষণা "বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ" ইহার লঙ্ঘন করেছেন ডিএসডাব্লিও স্যার।
(গ) ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, সেমিনার রুম, কাফেটেরিয়া সংলগ্ন জায়গার ব্যবহার ডিএসডাব্লিউ আওতাধীন। উনি বলেছেন, এ জায়গাগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে উনি অনুমতি দেননি। এক্ষেত্রে উনার অনুমতি ব্যতিরেকে বহিরাগতদের এ জায়গাগুলো ব্যবহার করার মতো ধৃষ্টতামূলক আচরণ ডিএসডাব্লিউ এর দায়িত্বপালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এমন ডিএসডাব্লিও এর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ চাই।
৫. আজ ৩০ মার্চের টার্ম ফাইনাল আমরা বর্জন করছি এবং আগামীকাল ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনাল সহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোন রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে না এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের আগমনকে কেন্দ্র করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলনে নামেন। এসময় ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ছয় দফা দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বহিষ্কারের দাবি তোলেন। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই আজ শনিবার রাব্বীসহ ৬ জনের স্থায়ী বহিষ্কারের আল্টিমেটাম দিলেন শিক্ষার্থীরা।