বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চোখে স্বাধীনতা
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। যার নাম বাংলাদেশ। এই দিনটি বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা রকম অভিমত থাকে। এই বিষয়গুলো নিয়ে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হৈমন্তী সরকার বলেন, “স্বাধীনতা হলো একটা জাতির সুপ্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতা অর্জন করতে হয় সাহস দিয়ে, সংগ্রাম করে। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাংলার সাধারণ মানুষদের একতাবদ্ধ সাহসের মধ্যে দিয়ে একটা জাতির প্রতিষ্ঠার সূচনা ঘটে যার ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী উৎস কর্মকার বলেন, “বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাস। এক সাগর রক্ত ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে এদেশের নিরীহ মানুষের উপর গণহত্যা চালায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এর আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এক নতুন মানচিত্র সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বুকে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা একজন মানুষের জন্মগত অধিকার। জাতিগতভাবে স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে শহিদ হতে হয়েছে, ২ লাখ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে। আমরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক। এ স্বাধীনতাকে আমাদের যে কোনো মূল্যে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। স্বাধীনতার চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। সুখী, সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে পারলে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্বপ্ন পূরণ হবে।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অয়ন চন্দ বলেন, “স্বাধীনতা মানে শুধু শত্রুর হাত থেকে দেশকে বাঁচানো নয়। কিংবা স্বাধীন বাংলার জয়ের ধ্বনি প্রকাশ নয়। বরং স্বাধীনতা হলো আপন আলোর স্বকীয়তা ধরে রাখা। যেমন: বাক-স্বাধীনতা জরুরি, তেমনি জরুরি সব ক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ! ২৬ শে মার্চ নিশ্চিত করে আমাদের স্বাধীনতা।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী বিপ্লব বর্মন বলেন, “স্বাধীনতা এমন একটি শর্ত, যেখানে একটি জাতি, দেশ, বা রাষ্ট্র বা জায়গা যেখানে জনগণ থাকবে, নিজস্ব শাসনব্যবস্থা, এবং সাধারণত কোন অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা, স্বাধীনতা মানে যা খুশি তা করা নয়। কিন্তু যুগ-যুগ ধরে বাঙালি জাতী পরাধীন ছিল। পরাধীন শাসনে বাঙালি জাতী হয়েছে নিষ্পেষিত। বিভিন্ন শ্রেণির শাসকগোষ্ঠী এ বঙ্গীয় নামের জনপদ শাসন-শোষণ করেছে। কিন্তু কারো কাছে মাথা নত করে থাকা বাঙালির স্বভাব নয়। তাই পরাধীন শৃঙ্খল ভাঙতে অতিতে আমাদের বীর সন্তানরা লড়াই করেছে; সংগ্রাম করেছে প্রিয় স্বাধীনতার জন্য। সত্যিই বাঙালি জাতী একাত্তরে মাথা নোয়ায়নি। তাই আমি মনে, বঙ্গবন্ধু যদি স্বাধীনতা ডাক যদি না দিত তাহলে হয়তো এখনো এদেশ স্বাধীন হতো না। তাই তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে হবে। পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত হতে হবে।”