১৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৩

পরীক্ষার হলে মোবাইল দেখে লিখতে বাধা, শিক্ষিকাকে রুমে আটকে রাখল নোবিপ্রবি ছাত্রলীগ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগ নেতাকে মোবাইল ফোন দেখে লিখতে বাধা প্রদান করায় দায়িত্বরত এক পর্যবেক্ষককে (শিক্ষিকা) রুমে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে বাধা দেওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক হল পর্যবেক্ষক শিক্ষকদের সঙ্গে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. বিপ্লব মল্লিক এবং সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম সেলিম এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এ ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলছে শিক্ষক সমিতি। অন্যথায় তারা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে।

এর আগে বুধবার (১৩ মার্চ) মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ ছাত্রলীগের উপশাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আল হোসেন রাফির খাতা আটক করে কর্তব্যরত পর্যবেক্ষক।

পরীক্ষার শেষে এ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরসহ শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন রাফিসহ তার সহযোগীরা। পরে ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলনসহ অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এসময় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগান দিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিবৃতিতে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি বলছে, বুধবার (১৩ মার্চ) পরীক্ষার হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জনৈক ছাত্রনেতার শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে বাধা দেওয়ায় ওই শিক্ষার্থী হল পর্যবেক্ষণ শিক্ষকদের সঙ্গে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে কতিপয় ছাত্রনেতা হল পর্যবেক্ষককে রুমে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ওই শিক্ষক, পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ কুরুচিপূর্ণভাবে অসদাচরণ করে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ ঘটনায় আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে দায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষক সমিতি কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

“এছাড়া বেশ কিছুদিন থেকে ছাত্রলীগের পদধারী কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলসমূহে নিয়মবহির্ভূত হস্তক্ষেপ করছে এবং কর্তব্যরত শিক্ষকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে। পরীক্ষার হলসমূহে পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক বলেন, বুধবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর দায়ী উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের বিচার দাবিতে সভায় সব শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাই সর্বসম্মতিক্রমে উপাচার্যকে ওই দাবি সংবলিত প্রতিবাদলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকদের দাবি, পরীক্ষা চলাকালীন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ওই ছাত্র মোবাইল বের করে খাতায় লিখতে থাকেন। কক্ষের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষিকা তাকে নকল করতে বারণ করলেও শোনেননি রাফি। পরে তার খাতা নিয়ে আটকে রাখলে ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফোন করেন রাফি। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভ তেড়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

এমন অভিযোগ অস্বীকার করে নোবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম রহমান বলেন, শিক্ষককে রুমে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটেনি। আমি দেখেছি বিপ্লব মল্লিক স্যার নিজেই দায়িত্বরত ম্যাডামকে স্যারের রুমে নিয়ে বসিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে এসেছিলেন। আর  যদি এরকম হয়ে থাকে উনারা নাম প্রকাশ করুক আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যার বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ তার ফোন বন্ধ ছিল কিন্তু দায়িত্বরত ম্যাডামের ফোন এবং ল্যাপটপ দুটোই চালু ছিল।

“আমার প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ইউজ করতে পারবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কি বলে? আমি দোষীদের পক্ষ নিচ্ছি না। শিক্ষার্থী যদি দোষী হয় তাহলে তো ম্যাডামও দোষী। তাহলে শাস্তি ২ জনেরই হওয়া উচিত। কারণ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনবরত কল আসতেছিল। এতে কি শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে না? নকল করলে তাকে শাস্তি দিবে এটাতে আমার কোনো দ্বিমত নাই। সুযোগ থাকলে আরো ২ বছর বাড়ায় দিক। কিন্তু বিনা অপরাধে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার তো দরকার নেই।”

পরীক্ষার হলে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ইউজ করা যাকে কিনা, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কি বলে জিজ্ঞাসা করা হলে নোবিপ্রবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কিছু বলা নেই। শুধু আমাদের না, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শিক্ষক মোবাইল নিতে পারবে না এরকম কিছু বলা নেই। তবে আমি মনে করি এটা আমাদের লিকেজ। বর্তমানে ফোনের প্রতি আসক্তি সবার। শিক্ষকরা যদি পরীক্ষার হলে ফোন ইউজ না করে হাঁটাহাঁটি করেন তাহলে শিক্ষার্থীরা নকল করতে ভয় পাবে। আমি এ বিষয়ে ভিসি স্যারকে বলেছি। আশা করি আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এটা তোলা হবে।