০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫৩

বশেমুরবিপ্রবি ছেড়ে ঢাবিতে জয়ী প্রার্থী, কে হবেন শিক্ষক সমিতির সম্পাদক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচন-২০২৪ এ সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু দ্বায়িত্ব গ্রহণের আগেই তিনি গত বৃহস্পতিবার বশেমুরবিপ্রবি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিমণ্ডলে। তবে এ পদে আসা নিয়ে একাধিক শিক্ষকের নামও শোনা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে সাদ্দাম হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তার নাম।

এর আগে, গত ৩১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে ৮ ভোটের ব্যবধানে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সাদ্দাম হোসেন।

জানা গেছে, শিক্ষক সমিতির নিয়মানুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রথম শর্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষক হতে হবে। সেক্ষেত্রে ৩১ জানুয়ারি নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করলে তার প্রার্থী থাকার সুযোগ নেই। আবার নির্বাচন শেষ হওয়ার পর অব্যাহতি গ্রহণ করলেও রয়েছে বেশ কিছু জটিলতা।

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের ৮(ঝ) নং ধারা অনুযায়ী, ‘নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং কার্যনির্বাহী সংসদের অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে ফলাফল ঘোষিত হবে।’ এছাড়াও বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে বিদায়ী সংসদের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক একটি সাধারণ সভা আহুত হবে যা বার্ষিক সভা নামে অভিহিত হবে। এই সভায় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক বিগত বছরের কার্যক্রমের বিবরণী উপস্থাপন করবেন এবং কোষাধ্যক্ষ পূর্ববর্তী বছরের আয়ব্যয়ের নিরীক্ষিত হিসাব পেশ করবেন। নবনির্বাচিত সংসদ দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বিদায়ী সংসদ রুটিন কাজ চালিয়ে যাবেন।’

এ ধারা অনুযায়ী শিক্ষক সমিতির দায়িত্বভার গ্রহণের যে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা তা এখনও ঘটেনি এবং অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই ছাড়পত্র নিয়ে সাদ্দাম হোসেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করায় তিনি আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই নন। ফলে এই ধারা অনুযায়ী তার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের সুযোগ নেই।

অপরদিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একটি কমিটি দায়িত্বভার গ্রহণের পর সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেও প্রয়োজন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করা। 

এমন পরিস্থিতিতে করণীয় প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক নেতা বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র এক নয়। তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বিষয়ে মন্তব্য করাটা কঠিন। আর এ ধরনের বিষয় আগে কোথাও ঘটেছে বলেও জানা নেই।

তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকাই তাহলে কোনো প্রার্থী তার বৈধতা হারালে অপর প্রার্থীদের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হয় আর প্রতিপক্ষ প্রার্থী একজন হলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়। আবার অনেকসময় ফলাফল ঘোষণার পরও বিভিন্ন অভিযোগে ফলাফল স্থগিত করা হয়, বাতিল করা হয় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেকসময় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকেও জয়ী ঘোষণা করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষকের পরামর্শ, এক্ষেত্রে শিক্ষক সমিতি কি করবে সেটি তাদের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ না থাকলে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদানের বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ছাড়পত্র গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আগামীকাল কথা হবে।

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. গোলাম ফেরদৌস জানান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে কে দায়িত্ব পালন করবেন, এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির লিখিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। রবিবারে প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া এদিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কে পালন করবেন এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে।