বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার, অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দক্ষ ও গবেষণার অগ্রদূত হিসেবে একদিকে বুয়েট যেমন এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে ক্যাফেটেরিয়ার নিম্নমানের খাবার শিক্ষার্থীদের বিষিয়ে তুলছে। এ নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। তারা জানান, পূর্বে একাধিকবার বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস পেলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাফেটেরিয়ার এমন দশার কথা তারাও জানতো না। শিক্ষার্থীরাও এর আগে কোনো অভিযোগ করেননি। তারা অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়ার দরজা দিয়ে ঢুকে বাঁ পাশেই দেখা যাবে ভারি খাবারের পশরা। আছে ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ি, মুরগীর মাংস আরো অনেক কিছু। সেখানে গিয়ে বেশিরভাগ খাবারের পাত্র খোলা অবস্থায় রয়েছে। জানতে চাইলে কর্মকর্তাদের বলেন, ‘একটু পরেই তো সবাই এসে ভীড় করবেন। তখন তো ঢাকনা সরানোর সময় পাওয়া যাবে না, তাই আগেই খুলে রাখা হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ-অসন্তোষ থাকলে থাকলে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন। -রেজিস্ট্রার
শিক্ষার্থীরা জানান, এখানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বার্গার। সেই বার্গারের ভেতর ডালের বরা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তবে মেনুতে লেখা আছে চিকেন স্যান্ডউইচ। অথচ এই চিকেন স্যান্ডউইচের নামে বিক্রি করা হচ্ছে মেয়োনিজের রুটি। পাতলা দুটি স্লাইস রুটির মধ্যে মেয়োনিজ দিয়ে দিব্যি ৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে এটিকে।
এ বিষয়ে ক্যাফেটেরিয়ার কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রথমে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা বলেন, এই স্যান্ডউইচগুলো বাইর থেকে কিনে এনে কিঞ্চিৎ লাভ রেখে ক্যাফেটেরিয়ায় বিক্রি করছেন।
তিতুমীর হলের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তাদের অনেক জনবল থাকা সত্ত্বেও তারা বাইরে থেকে খাবার ক্রয় করে উচ্চমূল্যে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। তারা নিজেরা খাবারগুলো তৈরি করলে আমাদের আর স্যান্ডউইচের নামে মেয়োনিজ খেতে হতো না।
ক্যাফেটেরিয়ার অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, টেবিলগুলোতে সবসময় খাবারের পর্যাপ্ত পানি থাকে না। খাবারের তালিকায় ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিকেন শর্মা। সেই শর্মাতে চিকেনের পরিমাণের চাইতে শশার পরিমাণ এতটাই বেশি যে, এটিকে শশা শর্মা বললে খুব একটা ভুল হবে না।
‘‘কিমা পরোটার নামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের রুটি। খাবারের টেস্ট ও অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা যে সবজিরোল বিক্রি করেন সেটার প্রস্তুতপ্রণালী এবং উপকরণসমূহ সর্বোচ্চ দাম ২০ টাকা হতে পারে। যা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।’’
বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় খেতে আসা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, পূর্বের তুলনায় ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান অনেক কমে গেছে। বুয়েট প্রশাসনের উচিত, মানসম্মত খাবার সরবরাহে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার রান্নাঘরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রান্না। ফ্রিজের ভেতরের অবস্থা আরও শোচনীয়। ফ্রিজের ভেতরে মাছ-গোশতের রক্তের সঙ্গে বরফ জমে লেগে গেছে।
এখানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বার্গার। সেই বার্গারের ভেতর ডালের বরা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। তবে মেনুতে লেখা আছে চিকেন স্যান্ডউইচ। আর ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিকেন শর্মা। -শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
ক্যাফেটেরিয়ার দায়িত্বশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস জানান, তাদের কাছে কোনো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেননি। ক্যাফেটেরিয়ার এমন পরিবেশ নিয়ে তাদেরও জানা ছিল না।
অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের খাবারে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাফেটেরিয়ার জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ রয়েছেন। তারা ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করেন। শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ-অসন্তোষ থাকলে থাকলে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।