২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:০৮

গবেষণা প্রকল্পে অনুদান পাচ্ছেন চুয়েটের ৪ শিক্ষক

প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকার অনুদান পাচ্ছেন চার শিক্ষক  © ফাইল ফটো

চারটি পৃথক গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকার অনুদান পাচ্ছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) চার জন শিক্ষক। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের গবেষণা প্রকল্পের জন্য তাদেরকে এ অনুদান প্রদান করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বিদ্যুৎ চন্দ্র আইচ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

চার আলাদা প্রজেক্টের জন্য চুয়েট থেকে নির্বাচিত প্রথম গবেষক দলের সদস্যরা হলেন পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইসলাম মিয়া ও সহযোগী গবেষক হিসেবে আছেন এক‌ই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান। খনিতে নির্দিষ্ট গভীরতার নিচে যেখানে পাললিক শিলা স্তর রয়েছে সেই জায়গায় গ্যাস ও পানির মজুত থাকে। এই গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে শিলাস্তরের বিভিন্ন ভূ-ভৌতিক লগ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে পানি ও গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। যার মাধ্যমে নতুন করে আধুনিক তথা হালনাগাদ মডেল গঠন করা হবে যা ভূগর্ভে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণে সহায়তা করবে।

চুয়েটের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম কে মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দারের নেতৃত্ব অনুদান পাওয়া অন্য একটি গবেষণা দলের মূল লক্ষ হলো এক ধরনের তড়িৎ রাসায়নিক সেন্সর তৈরি করা। যেটি মানবদেহে এরিথ্রোমাইসিন নামক এন্টিবায়োটিকের ক্ষুদ্র উপস্থিতি পরিমাপ করবে৷ ঔষধ শিল্পে বহুত প্রচলিত একটি রাসায়নিকের নাম হলো এরিথ্রোমাইসিন। এদিকে এ প্রজেক্টে শুরুতে গ্রাফিন অক্সাইড থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে নেয়া হবে। গ্রাফিন অক্সাইড হলো এক ধরনের রাসায়নিক যা গ্রাফিনের অক্সিডাইজড ফর্ম এবং তা ন্যানো মেটেরিয়ালস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এরপর সেন্সরে ব্যবহৃত ভোল্টেজ পরিমাপক(পটেনশিয়োটর) এবং  বিশেষ তিন ধরনের ইলেক্ট্রডের মাধ্যমে মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদানগুলোর উপস্থিতি নির্ণয় করা যাবে। অধ্যাপক হায়দার বলেন, আমরা তড়িৎ রাসায়নিক সেন্সর প্রস্তুত নিয়েই কাজ করবো, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির ক্রয় মূল্য বেশি হওয়ার পরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। প্রস্তুত শেষে ল্যাবে পরীক্ষণ করা হবে এবং বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের লক্ষ নিয়েছি। এমন কাজ চিকিৎসায় নতুন দিক উন্মোচন করবে। এ প্রজেক্টে সহযোগী গবেষক  হিসেবে আছেন এক‌ই বিভাগের প্রভাষক সানজিদা মুকুট।

শিল্পায়নের এ যুগে নগরের শিল্প কারখানাগুলোতে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলোর একটি অংশ রং এবং তার উচ্ছিষ্ট। যা বৃষ্টির পানি কিংবা কারখানার নিষ্কাশন পদ্ধতির মাধ্যমে নদীতে গিয়ে মিশে যায়। ব্যবহৃত রঙে ক্ষতিকর উপাদানগুলো দিনে দিনে নদীর পানিকে বিষাক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী করে তোলে। যা  পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। কারখানায় ব্যবহৃত রঙের এমন ক্ষতিকর উপাদানগুলো নদীর পানি থেকে দূরীকরণ ও তাদের প্রভাব প্রশমন করার জন্য ডাবল পেরোভস্কাইট ক্রোমিয়াম ফেরাস অক্সাইড নামক এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করা হবে। যা নদীর পানির সাথে মেশানোর পর রঙে উপস্থিত উপাদানগুলোর সাথে বিক্রিয়া করে এবং ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাব থেকে  পানিকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। এমন উদ্ভাবনী প্রজেক্টের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ আলী ও সহযোগী গবেষক হিসেবে আছেন অধ্যাপক মো. মহি উদ্দিন ।

চুয়েটের হয়ে চতুর্থ প্রজেক্টে অনুদান পেয়েছেন রসায়ন বিভাগের আরও একটি গবেষণা দল। যার প্রধান হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ড. রঞ্জিত কুমার সূত্রধর ও গবেষণা সহযোগী হিসেবে রয়েছেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দীন ইসলাম। অধ্যাপক রঞ্জিত কুমার জানান, আমরা মূলত এক ধরনের হেটারো থায়াজোল বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করছি। হেটারো থায়াজোল এমন এক রাসায়নিক যৌগ যেখানে বেনজিন যৌগে কার্বন পরমাণুর সাথে সালফার ও নাইট্রোজেন যোগসাজশ ঘটবে। রাসায়নিকটি মূলত ঔষধ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। 

এখানে শুরুতে আমরা ফিনাইল থায়াজোল প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছি। এরপর তার সংশ্লেষণ, বিশ্লেষণ করবো। এখানে সফল হওয়ার পর জীবদেহে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। মানবদেহে এর প্রভাব কেমন, রাসায়নিক ধর্মগুলো জানার মধ্য দিয়ে দেহ গঠনে উপাদান কোষ ও ক্ষুদ্রতম উপাদান প্রোটিনগুলোর সাথে এর বিক্রিয়া জানতে এক ধাপ এগিয়ে যাবো। সর্বোপরি এ রাসায়নিকটি কোন ধর্ম বা মেকানিজম ব্যবহার করে বিক্রিয়া গুলো সংঘটিত করলো- বাকি অন্য কোনো গঠনের রাসায়নিক দ্রব্য এমন বিক্রিয়া দিলো না সেসবের কারণ উদ্ঘাটন করাই আমাদের মূল লক্ষ। আমাদের প্রজেক্টে সফলতা আমাদের ঔষধ শিল্প ও চিকিৎসা খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

বিশেষ গবেষণা অনুদানের জন্য নির্বাচিত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে গবেষক  ড.মোহাম্মদ ইসলাম মিয়া বলেন, এ অনুদান আমাদের গবেষণা প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সহায়তা করবে। উক্ত গবেষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণাক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে আরো বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে। প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন হলে চুয়েট গবেষণাখাতে আরো অগ্রগতির মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম বয়ে আনবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মসূচি’র আওতায় ৬৯৬টি গবেষণা প্রকল্পকে অনুদান দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার জন্য গবেষণা অনুদান প্রদান করে আসছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।