২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:২৫

শিক্ষক সংকটে নাজেহাল নোবিপ্রবির ৫ বিভাগ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ৩টি অনুষদের পাঁচটি বিভাগে তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষক সংকটে বিভাগগুলোতে তৈরি হচ্ছে সেশনজট, পাঠদান জটিলতাসহ নানান সমস্যা। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরুপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলমও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক সংকটে সৃষ্ট জটিলতায় দায় চাপানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উপর।

বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের নূন্যতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। অথচ নোবিপ্রবির এই সকল বিভাগের কোনোটিতে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য থাকে একজন শিক্ষক। আবার কোনো বিভাগে প্রতি ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক।

ইউজিসি অর্থনৈতিক সংকট দেখিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। এর ফলে চাইলেও নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছি না। -উপাচার্য

তীব্র শিক্ষক সংকটে থাকা নোবিপ্রবির বিভাগগুলো হলো- মানবিক অনুষদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও সমাজকর্ম বিভাগ। আইন অনুষদের আইন বিভাগ। শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্যমতে, মানবিক অনুষদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চলমান ৬টি ব্যাচের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। এর মাঝে ১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন। একই অনুষদের সমাজকর্ম বিভাগের চলমান পাঁচটি বিভাগের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৪ জন।

শিক্ষক সংকটের এমন পরিস্থিতিতে তৈরি হচ্ছে সেশনজট। সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। এক সেমিস্টারে একাই একজন শিক্ষককে নিতে হচ্ছে আটটি কোর্সের বেশি। এতে করে শিক্ষকদের উপর যেমন চাপ পড়ে তেমনি শিক্ষার গুনগত মানও রক্ষা করা যাচ্ছে না।

অধ্যাপক রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, যেখানে সঠিকভাবে বিভাগের সকল ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে ১৫ জনের উপর শিক্ষক প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস পরীক্ষা চালানো কষ্টকর।

আরও পড়ুন: শিক্ষক সংকটে ৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়াও শিক্ষক সংকটে থাকা আইন বিভাগের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। এদের মধ্যে ১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন।

আইন অনুষদের ডিনের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ একটি লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চাহিদার কথা বলা হলেও তারা পর্যাপ্ত নিয়োগ আমাদের দিচ্ছেন না।

শিক্ষক নিয়োগ একটি লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। -উপ-উপাচার্য

শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের দুটি বিভাগেও রয়েছে তীব্র শিক্ষক সংকট। শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের পাঁচটি ব্যাচে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। যার মধ্যে দুজনই শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন। একই অনুষদের শিক্ষা বিভাগেও রয়েছে শিক্ষক সংকট। এই বিভাগের ছয়টি চলমান ব্যাচের জন্য রয়েছে মাত্র ৬ জন শিক্ষক।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিপ্লব মল্লিক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হওয়া উচিত। তবে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে আমরা সেই সুযোগ পাচ্ছি না।

অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিক বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সংকট সত্ত্বেও শিক্ষকরা দ্বিগুণ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশাকরি শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে অতিদ্রুতই বিভাগগুলোর শিক্ষক সংকট দূর হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নাজেহাল অবস্থায় বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের কারণে আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ছি। এতে সবগুলো বিভাগেই তৈরি হচ্ছে সেশনজট। নির্ধারিত সময়েরও ৬-৮ মাস পর শুরু হচ্ছে সেমিস্টার।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বিভাগ চাইলে খন্ডকালীন শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, কোনো বিভাগে শিক্ষক সংকট যদি তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে তারা খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসির অনুমোদন লাগবে।

শিক্ষক সংকটের কারণে নাজেহাল অবস্থায় বিভাগগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের কারণে আমরা একাডেমিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়ছি। এতে সবগুলো বিভাগেই তৈরি হচ্ছে সেশনজট। -ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা

নতুন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে অধ্যাপক নেওয়াজ বাহাদুর জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য ইউজিসি বরাবর আবেদন করে যাচ্ছে। শিগগিরই হয়তো ইউজিসির অনুমোদনক্রমে আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা নিরুপায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষক সংকট নিরসনে শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি কমিয়ে দিচ্ছি। ইউজিসি অর্থনৈতিক সংকট দেখিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। এর ফলে চাইলেও নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছি না। তবে বিভাগগুলো চাইলে চুক্তিভিত্তিক খন্ডকালীন সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে।