১৭ অক্টোবর ২০২৩, ২০:৫১

জিডি তুলে নিতে পবিপ্রবি শিক্ষককে মারতে তেড়ে যান দুই কর্মকর্তা

জিডি তুলে নিতে পবিপ্রবি শিক্ষককে মারতে তেড়ে যান দুই কর্মকর্তা  © সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে হেনস্তা ও লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ওই দুই কর্মকর্তা পবিপ্রবি শিক্ষককে গালমন্দও করেছেন। ঘটনাটি চলতি বছরের মে মাসের। তবে সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল কর্মচারী মো. শামসুল হক ওরফে রাসেল মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন মন্ডলকে কৃষি অনুষদের সামনে হেনস্তা করেন। তবে এ ঘটনা অস্বীকার করেছেন জড়িতরা।

বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা। এটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এ ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -উপাচার্য

ভিডিওতে দেখা যায়, হেনস্তার এক পর্যায়ে ওই দুই কর্মকর্তা অশ্রাব্য ভাষায় শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে গালিগালাজ করেন। একইসঙ্গে তাকে মারধর করতে তেড়ে আসেন ওই দুই কর্মকর্তা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহীন হেসেন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াজকুরুনি তাদের বাঁধা দেন।

ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্তব্য করায় অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ওয়াজকুরুনি এ শিক্ষককে মুঠোফোনে হুমকি দেন। পরবর্তীতে মো. ওয়াজকুরুনি ও মো. শামসুল হক ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে মো. আনোয়ার হোসেন মন্ডল পটুয়াখালীর দুমকি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ওই জিডি প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্নভাবে মো. আনেয়ার মন্ডলকে চাপ দিতে থাকেন ওই কর্মকর্তারা। এর প্রেক্ষিতেই একাডেমিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন মন্ডল জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলায় তারা আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। পরবর্তীতে আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে জিডি প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে।

শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. শামসুল হক (রাসেল) জানান, একাডেমিক ভবনের সামনে এ শিক্ষকের সাথে কোন ধরনের গালমন্দ বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি। আর এ ধরনের কিছু প্রমাণ হলে প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এদিকে, গালমন্দ ও মারতে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মো. আতাউর রহমান বলেন, মো. আনোয়ার মন্ডল অফিসারদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলেন। পরবর্তীতে ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি একটি জিডিও করেন। সেগুলো মীমাংসিত। তাকে গালমন্দ বা মারতে যাওয়ার কোন প্রমাণ নেই।

তবে, সম্প্রতি এ ঘটনাকে আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

একাডেমিক ভবনের সামনে এ শিক্ষকের সাথে কোন ধরনের গালমন্দ বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি। আর এ ধরনের কিছু প্রমাণ হলে প্রশাসন আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। -শামসুল হক

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জায়গা। এটি পেশিশক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। এ ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগেও বিভিন্ন শিক্ষককে হেনস্তার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মো. শামসুল হক (রাসেল) ও মো. আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সম্প্রতি নিয়মমাফিক দপ্তরে অনুপস্থিত থেকেও একমাসে ৪৫ দিনের বেতন নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় মাস্টাররোলে কর্মরত মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধে। যা দেশের প্রথম শ্রেণীর গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়।