৩০ দিন কাজ করে ৪৫ দিনের বেতন তোলেন পবিপ্রবির ২ কর্মকর্তা
মো. শামসুল হক ওরফে রাসেল। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার মাস্টাররোল (অস্থায়ী) কর্মকর্তা। সময়ের হিসেবে একমাসে সর্বোচ্চ ৩০ কিংবা ৩১ দিন থাকলেও তিনি বেতন নেন ৪৫ দিনের। এছাড়া কর্মকর্তা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাদলের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাও একই কাজ করছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সু-সম্পর্ক জমিয়ে ৩০-৩১ দিন কাজ করে ৪৫ দিনের বেতন তোলার এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শামসুল হকের মতোই আয়শা সিদ্দিকাও এক মাস কাজ করে ৪৫ দিনের বেতন তুলছেন।
ক্যাম্পাসে কয়েকজন নির্ধারিত আট ঘণ্টার পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করেন। এ কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে। -উপাচার্য
রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তরের ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন। তাদের সকলের মাসিক বেতনের হিসাব ৩০ দিনে হলেও মো. শামসুল হক (রাসেল) একদিন অফিস করে বেতন পান দেড় দিনের অর্থাৎ একমাস অফিস করে ৪৫ দিনের বেতন নিচ্ছেন তিনি।
অভিযুক্ত রাসেল অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত বেতন নেওয়ার দাবি করলেও নীতিমালায় তার দাবির যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া শামসুল হক ছাড়াও কর্মকর্তা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাদলের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাও ৩০ দিন কাজ করে ৪৫ দিনের বেতন তোলেন। আর শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার নাসরিন আক্তার ৩০ দিন কাজ করে তোলেন ৪২ দিনের বেতন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের তথ্যমতে, উপাচার্যের কার্যালয়, জরুরি বিভাগ, অতিথি ভবন ও পরিবহণ শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেবল অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ নীতিমালায় থাকলেও তিনি আছেন রেজিস্ট্রার অফিসের সংস্থাপন শাখায়।
তাছাড়া তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের দাবি করলেও একাধিকবার তার দপ্তরে খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ মাসে ৯০ ঘণ্টা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন বাবদ বেতন উত্তোলন করতে পারেন।
আরও পড়ুন: প্রমোশনের লোভ দেখিয়ে ‘একান্তে সময় কাটাতে ডাকলেন’ পবিপ্রবি কর্মকর্তা
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মো. শামসুল হক (রাসেল) বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক মতো অফিসও করেন না, বেশীরভাগ সময়ই তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করেন। তবুও কীভাবে ১২০ ঘণ্টা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের বেতন নেন, সেটাই এখন প্রশ্নের তৈরি করেছে।
শুধু তাই নয়, তার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রশাসনের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে রয়েছে তার সু-সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে একাধিকবার দুর্ব্যাবহার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাসে কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে তার একাধিক বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এমনকি এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে মো. শামসুল হক বলেন, ‘‘আমি ক্যাম্পাসের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে কাজ করছি। প্রশাসন ভালো মনে করেই অতিরিক্ত বেতন দিচ্ছেন।’’ নিয়মিত অফিস না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার সিনিয়র কর্মকর্তা আছেন, এ বিষয়টি তারা দেখবেন।’’
রাসেল অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত বেতন নেওয়ার দাবি করলেও নীতিমালায় তার দাবির যৌক্তিকতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, ‘‘মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইতোমধ্যে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তাছাড়া তার অতিরিক্ত বেতন তোলার বিষয়েও অভিযোগ পেয়েছি। তার বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আলোচনা হবে, একইসঙ্গে উপাচার্যকেও বিষয়টি অবহিত করা হবে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ক্যাম্পাসে কয়েকজন নির্ধারিত আট ঘণ্টার পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করেন। এ কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে।’ দাপ্তরিক সময়েও তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা করলে তারা বেতন পাবেন না। এসব কারণে তাদের চাকরিও স্থায়ী হচ্ছে না।