রড চুরির দায়ে পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতিকে সাময়িক অব্যাহতি
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) চাঁদা না দেয়ায় রড ও মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া এবং মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম সাগরকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, শৃঙ্খলা পরিপন্থি ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আরাফাত ইসলাম খান সাগর (সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) কে তার স্বীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
একই সাথে তার বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব উল্লিখিত ব্যক্তিকে আগামী ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এর আগে এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে স্থানীয় দুমকী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বরাবর লিখিত অভিযোগসহ সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ভুক্তভোগী।
অভিযোগে জানানো হয়েছে, পবিপ্রবির অভ্যন্তরে নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ রাসেল হল ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হল। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে রাতে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের সামনে থেকে ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী গোলাম রাব্বানী সুহৃদ, ইমরান হোসেনসহ ৬/৭ জন ভ্যানে করে রড নিয়ে যাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে প্রজেক্ট সুপারভাইজার সালাউদ্দিন সিকদার ‘রড কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি এ রড নিতে বলেছে বলে জানান।
আরও পড়ুন: চাঁদা না দেয়ায় নির্মাণসামগ্রী নিয়ে গেছে পবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
পরে সালাউদ্দিন প্রজেক্ট ম্যানেজার এনামুলকে ফোন দিলে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে রড নিতে বাঁধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানী সুহৃদ এলোপাতাড়িভাবে এনামুল হক, সুপারভাইজার সালাউদ্দিনসহ নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করেন। এ সময় তারা এনামুলের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায়। সালাউদ্দিন সিকদার দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. এনামুল হক বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে দুমকি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য এসব অভিযোগ করেন।
এদিকে কয়েকদিন আগের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চাঁদার জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজার এনামুল হককে গালিগালাজ করছেন সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর। ওই ভিডিওতে সাগরকে বলতে শোনা যায়, ‘কত টাকা দিয়েছে?’ পাশে থাকা ছাত্রলীগের আরেকজন নেতা বলেন, ‘তিন বাষট্টি দিছে।’
এ বিষয়ে পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম সাগরের অনুসারী গোলাম রাব্বানী সুহৃদ বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির অবৈধ নেম প্লেট, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, মেয়েদেরকে উত্ত্যক্তসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার এনামুল আমাদের মারতে উদ্ধত হন। আত্মরক্ষার জন্য হলে ফোন দিলে তারা পালিয়ে যায়।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগর বলেন, আমি ঘটনার সময় ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। নির্বাচনের আগে এ ধরনের অভিযোগ ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার একটি নীল-নকশা।
এ নিয়ে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর পবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি তোলা হবে এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।