১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:০৩

শাবিপ্রবির ছাত্রীদের সাব-হলের প্রতিটি কক্ষই যেন একেকটি ‘গণরুম’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সাব-হলগুলোতে (ভাড়া নেওয়া ভবন) প্রতি রুমে আটজন করে থাকতে হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রীদের। করোনা মহামারির ফলে দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শাবিপ্রবিও সেশনজটের বিপাকে পড়েছে। ফলে যেখানে ৫টি ব্যাচ থাকার কথা সেখানে বর্তমানে রয়েছে ৬টি ব্যাচ। একটি ব্যাচ অতিরিক্ত ও হলের সিট সংখ্যা কম থাকায় ভর্তির পর শহরের বিভিন্ন জায়গায় মেস ও হোস্টেল খুঁজতে বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেছে ছাত্রীদের।

বর্তমানে শাবিপ্রবিতে ৩টি ছাত্র হলের পাশাপাশি ২টি ছাত্রী হল চালু রয়েছে। তাছাড়া ছাত্রীদের জন্য নির্মাণাধীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল উদ্বোধনের কথা থাকলে তা এখনো হয়নি। হলটির কাজ গত বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর পরও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। মাত্র দু’টি ছাত্রীহল হওয়ায় জায়গা না পেয়ে হলের মসজিদ ও রিডিং রুমে থাকছেন ছাত্রীরা।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও বেগম সিরাজুন্নেসা ছাত্রী হলের অধীনে সাব-হল রয়েছে মোট ৩টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন ফজল কমপ্লেক্স, আমির কমপ্লেক্স এবং মদিনা মার্কেটস্থ সামাদ হাউজে থাকেন মূল হলে সিট না পাওয়া ৪ শতাধিক ছাত্রী। যেখানে ছাত্রীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। প্রতিমাসে নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করেও মিলে না পর্যাপ্ত সেবা। হল কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর দেখাশোনার অভাবে নানা সমস্যা মেনে নিয়েই থাকতে হচ্ছে ছাত্রীদের। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর হলগুলোতে যোগাযোগ করি একটি সিটের জন্য। হল কর্তৃপক্ষ জানায়, হলে ও হলের অধীনে থাকা হোস্টেল গুলোতে আপাতত জায়গা নাই এবং আমাদের নিজের মত করে ব্যবস্থা করতে। সিলেটে আমার কোন আত্মীয় স্বজন ও পরিচিত কেউ না থাকায় শুরুতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে এভাবে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্রী বলেন, হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা হোস্টেল গুলোতে সিট না পেয়ে আমি বর্তমানে একটি হোস্টেলের বারান্দায় অবস্থান করছি। যেখানে আমার প্রতিমাসে খাবার খরচসহ হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে আট হাজার টাকা। যা খুবই ব্যয়বহুল। 

তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হোস্টেলে থাকা কয়েকজন ছাত্রী তাদের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তারা সেখানে উল্লেখ করেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চলে ভোগান্তি। ১৮-২০ জন মেয়ে মিলে ব্যবহার করতে হয় একটা মাত্র ওয়াশরুম। মাসে ২ থেকে ৩ বার মটর নষ্ট হয়ে পানি নিয়ে কষ্ট পাওয়া লাগে। তাছাড়া নেই আলাদা নামাজের রুম ও রিডিং রুম। এক রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয় ৬ জনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা হোস্টেল গুলোতে না থাকলে মেইন হলে সিট পাওয়া যাবে না এমন নিয়মেরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

নির্মাণাধীন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. চন্দ্রানী নাগ বলেন, আমি নিয়মিত হলের কাজের দেখাশোনা করছি, যেন হলটির কাজ দ্রুত শেষ করে চালু করতে পারি। ছাত্রীরা অনেক কষ্টে আছে। কিন্তু অফিসিয়াল কাজের জন্য ইউজিসির অনুমতি না পাওয়ায় অফিসে কাউকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি খুব দ্রুত হলটি চালু করা হবে।

সাব-হলে না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠতে পারবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে শাবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন রুলস নাই, যেখানে সাব-হলে না থাকলে মেইন হলে সিট পাবে না। যদি আমাদের হলে জায়গা না হয় তখন তাদেরকে সাব-হলে গুলোতে উঠানো হয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি এ মাসের মধ্যে নতুন হলের কাজ শেষ করতে। কাজ সম্পন্ন হলে আগামী মাস থেকে ছাত্রীদের হলে উঠানো হবে।

এ বিষয়ে শাবিপ্রবির উপচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।