পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করাতেন ভিসি নিজেই, জানতো না কেউ
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন চম্পা খাতুন। ভর্তি ফরমে উল্লেখ করা হয়েছিল, তিনি ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল আসাদের মেয়ে। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, চম্পা খাতুন আবদুল্লাহ আল আসাদের মেয়ে নন; বরং তার স্ত্রীর বোনের মেয়ে।
শুধুমাত্র চম্পা খাতুনই নন, অভিযোগ রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে ১৭-১৮ এবং ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে এভাবে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ঔরসজাত সন্তান এবং স্বামী-স্ত্রী পোষ্য কোটার জন্য বিবেচিত হয়। তবে এসব শিক্ষাবর্ষে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ঘোষিত পালিত পুত্রকন্যা, ভাই-বোনকেও পোষ্য হিসেবে ভর্তি করিয়েছে বশেমুরবিপ্রবি।
আরো পড়ুন: শোকজ পাওয়া শিক্ষক মাইদুল বললেন, মতামতের সঙ্গে ভাবমূর্তির সম্পর্ক নেই
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ভর্তি কমিটি। সকল অনুষদের ডিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। পোষ্য কোটায় ভর্তিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ কমিটিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অন্যান্য বিভিন্ন কমিটির মত এ কমিটিতেও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামত প্রয়োজন হয়। যদিও বশেমুরবিপ্রবি বলছে, এসব শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়ে ভর্তি কমিটি নয় বরং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনে বিগত পাঁচ বছরের পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়ে আবেদন করলে তথ্য উঠে আসে। পাঁচ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃতদের তথ্য চাওয়া হলেও আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃতদের তথ্য প্রদান করতে ব্যর্থ হয়।
এ তিন শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃতদের তথ্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব লিখিত জানিয়েছেন যে, উক্ত শিক্ষাবর্ষসমূহে তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) মহোদয় নিজে তার অফিস থেকে পোষ্য কোটায় ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করতেন। ফলে ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পোষ্য কোটায় ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য তিনি দিতে পারেননি।
ওই তিন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মো. আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া ও তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির বর্তমান রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, সব শিক্ষার্থীর তথ্যই রেজিস্ট্রার দপ্তরে থাকার কথা। তবে এটাতো আগের বিষয়। ওইসময়ে আমি ছিলাম না। বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ-খবর নিব।