০৮ আগস্ট ২০২৩, ১৫:১২

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি রুখে দিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের শপথ

শিক্ষার্থীদের শপথ  © টিডিসি ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ অমান্য করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার শপথ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সম্মিলিত কন্ঠে এ শপথ পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত হাজারো শিক্ষার্থী এ শপথ পাঠে অংশগ্রহণ করেন। 

সম্মিলিত কন্ঠে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আজ, এই মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার উপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক, নৈতিক ও মানবিক, সকল প্রকার দায়িত্ব, সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকব।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে সম্মিলিতভাবে রুখে দিব। নৈতিকতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপ-সংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সমূলে উৎপাটিত করব। এই আঙ্গিনায় যেন নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়। আর কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করব।

এসময় বুয়েটে চলমান পরিস্থিতি ও আবরার হত্যা মামলায় বুয়েট থেকে বহিষ্কৃত আশিকুল ইসলাম বিটু পুনরায় কেমিক্যাল ১৯ ব্যাচের সাথে ক্লাস করতে আসার ঘটনা ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ২৪ জন বর্তমান শিক্ষার্থী আটকের ঘটনায় নানা গুজব এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ ঘটনায় বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, আমরা সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে আমরা কোন অবস্থাতেই সরে আসব না। যেকোন ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহনযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর ব্যাপারেও ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত কি না বা অন্য কাউকে প্রভাবিত করছে কিনা এই মর্মে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে তদোপরি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, গত ৩০ জুলাই ২৪ জন বর্তমান স্টুডেন্টসহ ৩৪ জন সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নাশকতার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে আটক হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিপক্ষে থাকবে। একইভাবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তবে নির্দোষরা যেন আর কোনভাবে কোন হয়রানির স্বীকার না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করব। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কোন সাংগঠণিক ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত কিনা বা তারা ক্যাম্পাসে অন্য শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে কি না এই ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিযেছি। যদি তাদের এরূপ কোন সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয় তবে ভার্সিটির অধ্যাদেশ অনুযায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। এবং যদি তারা নির্দোষ হয়, তাহলে তারা যেন সুস্থ একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে তার দাবি জানানো হচ্ছে।

“গতকালের অবস্থান কর্মসূচিতে আমরা আবরার হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে ফেরার বিপরীতে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। এরকম কুখ্যাত একজন ব্যক্তির সাথে ক্লাস এবং ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনভাবেই রাজি নই এবং কর্তৃপক্ষকে আজকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না আসলে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম এ অংশগ্রহণ না করার মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দ্বিধা করব না।”