৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইকবালের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি বশেমুরবিপ্রবিসাসের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দৈনিক যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বশেমুরবিপ্রবিসাস) সদস্যরা।
সোমবার দুপুর ৩ টায় জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তার চর্চাকারী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন দুর্নীতি হচ্ছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। তার এই বক্তব্যের অডিও রেকর্ডও রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির দৈনিক যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ার যখন উপাচার্যর বলা কথাগুলোই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে তখন উপাচার্য তাকে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে বহিষ্কার করেছেন। তার এ বহিষ্কারাদেশ সম্পূর্ণ অবৈধ এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা এই আদেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ইকবালের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে কুবি উপাচার্যকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য জাতির সামনে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাচ্ছি।
বশেমুরবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি অনিক চৌধুরী তপু বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি একজন সাংবাদিককে বহিষ্কার করা হয়েছে উপাচার্যের বলা কথা গণমাধ্যমে লেখার কারণে। এই বহিষ্কারাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার জায়গা, এখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আবশ্যক। যেই বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল সেই বক্তব্যে উপাচার্য স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন দুর্নীতি হচ্ছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু যখন এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলো তখন তিনি বিষয়টিকে ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করলেন। এখন প্রশ্ন হলো বিষয়টি যদি ক্রিটিকাল থিংকিংই হয় তাহলে উপাচার্য কেনো যুক্তি দিয়ে সেটি প্রমাণ না করে অবৈধভাবে সাংবাদিককে বহিষ্কারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কলম থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন? দেশের সংবিধান পরিপন্থী, আইন পরিপন্থী বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন পথে নিতে চাচ্ছেন? একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করে তার এ বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ড সমগ্র শিক্ষাঙ্গনের জন্য হুমকিস্বরূপ। অবিলম্বে ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং উপাচার্যকে জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. আশরাফুল আলম বলেন, গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সমাজের নানা দুর্নীতি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা তুলে ধরে গণমাধ্যম। পূর্বেও আমরা দেখেছি সাংবাদিকদের দমিয়ে রাখতে হুমকি, বহিষ্কার, ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে কুবিতেও তার ব্যতিক্রম নয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্য প্রকাশ্যে দুর্নীতির পক্ষে কথা বলেছেন এবং বিষয়টি যখন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তখন নিয়মের তোয়াক্কা না করে সাংবাদিক বহিষ্কার করেছেন। এমনকি ওই সাংবাদিককে আবাসিক হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপাচার্য তার স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং ক্যাম্পাসে মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিতের জন্য আমরা কুবি উপাচার্যকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম জানাচ্ছি। অন্যথায় আমরা আরো জোরালো পদক্ষেপে যেতে বাধ্য হবো।
বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন পরান বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক রুদ্র ইকবাল মনোয়ারকে কোনরকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যা প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাবকে প্রকাশ করে। বশেমুরবিপ্রবির সাবেক উপাচার্যও এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সহকর্মী জিনিয়াকে বেআইনিভাবে বহিষ্কার করলে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকরা তা প্রতিহত করে। সুতরাং অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তার হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মুক্তচিন্তার পথকে প্রসারিত করে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
মানববন্ধনে বশেমুরবিপ্রবিসাসের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ ওহাব, সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিসুল ইসলাম,কার্যনির্বাহী সদস্য শাহ মো. জহুরুল ইসলামসহ সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেন। পরে তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস আদেশে উপাচার্যের বক্তব্যকে ‘বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচারে’র অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মী ইকবাল মনোয়ারকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।