দলবল নিয়ে লিফট কিনতে তুরস্ক যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য
বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের জন্য লিফট কেনা ও তদারকির কারণ দেখিয়ে ১০ দিনের তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল খানসহ ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ৯ মে এই সফরের নির্ধারিত দিন থাকলেও ভ্রমণ পিছিয়ে আগামী ৬ জুন তুরস্কের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খানকে দলনেতা করে প্রতিনিধি দলটিতে উপ দলনেতা হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন। এছাড়াও সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী মো. রিপন আলী ও উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী জহির মোহা. জিয়াউল আবেদীন। সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান।
সম্প্রতি সফরের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে জানিয়েছেন, যিনি নিজেও এই ভ্রমণকারীদের একজন।
চিঠিতে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনার লিফট সংগ্রহের প্রাক জাহাজীকরণে ছয় সদস্যের একটি পরিদর্শক দলের তুরস্ক ভ্রমণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাডেমিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলসহ মোট পাঁচটি আধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর জন্য প্রায় ২৫টি লিফট কেনা হবে। আর সেই লিফট কেনাকাটা ও তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল তুরস্ক সফরে যাচ্ছে।
এদিকে লিফট কেনার কারণ দেখিয়ে তুরস্ক ভ্রমণের এমন আয়োজনের সমালোচনা করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে জেলাজুড়ে। তারা বলছেন, এ ধরনের ছোটখাটো কারণে বিদেশ ভ্রমণ বিলাসিতা এবং জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের এমন বিদেশ সফরকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করছে সচেতন মহল।
আরও পড়ুন: পবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি অফিস ভাংচুর-লুটপাট
পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, বর্তমানে গুগলে সার্চ দিলেই সব ধরনের লিফটের ডিজাইন পাওয়া যায়। সারাদেশে বিশাল বিশাল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০ তলা ভবনের লিফটের জন্যও তুরস্ক, জার্মানি, চায়না বা রাশিয়ায় প্রতিনিধি দল যেতে হয়নি। তাহলে পাবিপ্রবির সামান্য কয়েকটি লিফট কেনার জন্য কেন অর্থ অপচয় করে বিলাসবহুল সফর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বিশাল বিশাল ভবনের জন্যও লিফট কিনতে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ঠিকাদার কেন ২০ লাখ টাকা খরচ করে শিক্ষকদের লিফট কেনার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে নিশ্চয় যত খারাপ লিফট, নিম্নমানের লিফট রয়েছে সেগুলো কিনে আনা হবে। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান নিয়ে চিন্তা না করে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। এজন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে প্রথম হলেও সেই শিক্ষার্থীকে চাকরি দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের জন্য অরাজকতা শুরু হয়েছে।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, দেশেই এখন লিফট সরবরাহের জন্য বড় বড় প্রতিষ্ঠান হয়েছে। ইন্টারনেটের সুবাদে দেশ-বিদেশের লিফট দেখা যায়। এ সময়ে এ ধরনের ভ্রমণ বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। এটি অর্থের অপচয়ও বটে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, মানুষ এখন একটি শার্ট কিনতে গেলেও বোতামটি উল্টিয়ে দেখেন। প্রকল্পটি চার বছর আগের। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই, আবার সরকারের সংশ্লিষ্টতাও নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক জি এম আজিজুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই এই সফর হচ্ছে। এতে সরকারি কোনো অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে না। সফরের এই অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, সফরের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা আছে। এ সফর আরও আগে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সম্মান করেই এত বিলম্ব করেছি।