‘সাঙ্গু বাস আমার বাপের’, সাংবাদিককে ডেকে চুয়েট ছাত্রের দম্ভোক্তি
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) বাসে সিট নিয়ে দলগত আধিপত্য বিস্তার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও ঘটছে হুমকি এবং বাকবিতণ্ডার মতো ঘটনাও। এরইমধ্যে চুয়েটের একটি বাসকে নিজের ‘পৈতৃক সম্পত্তি’ বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান রাসেল।
সোমবার রাত ১১টায় চুয়েট তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং চুয়েট সাংবাদিক সমিতির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান আসলামকে রুমে ডেকে নিয়ে এমন কথা বলেন রাসেল। এর আগে গত ২৯ মে ‘চুয়েট বাসে সিট নিয়ে আধিপত্যের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
সেই সংবাদে চুয়েটের তিস্তা, সুরমা এবং সাঙ্গু নামে তিনটি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক দুইটি গ্রুপের দখলের কথা উঠে আসে। প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেন রাসেল। এ সময় বাকি দু’টি বাস দখলের সংবাদে তাদের আপত্তি না থাকলেও ‘সাঙ্গু’ বাসটির নাম সংবাদে কেন আসল, এ নিয়েও হাবিবকে মানসিক চাপ ও প্রশ্ন করেন।
জানা গেছে, সোমবার সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাউন্টের স্টোরিতে শেয়ার করেন মো. হাবিবুর রহমান আসলাম। স্টোরি দেখার পরেই ১১টায় শহীদ মোহাম্মাদ শাহ হলের ১১৬ নাম্বার রুমে হাবিবকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন মাহমুদুল হাসান রাসেল। রুমে পৌঁছানোর পর রাসেল ও আগে থেকে অবস্থানরত কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান আল বিরুনি, সুরঞ্জন সরকার সহ আরও অনেকে হাবিবকে প্রশ্ন করতে থাকেন।
সাঙ্গু বাস তার পৈতৃক সম্পত্তি বিধায় এটার দখল নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না, এমন দাবি করে হাবিবকে লক্ষ করে রাসেল বলেন, ‘সাঙ্গু বাসকে নিয়ে তুমি কেন পোস্ট করছো? সাঙ্গু বাস আমার বাপের সম্পত্তি, আসলেই বাপের সম্পত্তি।’ জবাবে হাবিব বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে সোস্যাল মিডিয়া বা মাধ্যমে মতপ্রকাশকে নিজের নাগরিক অধিকার।’
রাসেল তৎক্ষণাৎ তাকে স্টোরি ডিলিট করার জন্য চাপ দেন। পরবর্তীতে এমন পোস্ট করলে ‘এর ফলাফল ভাল হবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একপর্যায়ে রাসেল বলেন, ‘সাঙ্গু বাসে যে আমরা যাতায়াত করি, সেটা সবাই জানে। কেউ যদি এসে সেটা নিয়ে পোস্ট করে আমাদের গায়ে লাগবে। তুমি এইটা নিয়ে পোস্ট করবা না। তুমি এরকম জায়গায় হাত দিবা না।’
বাস দখল ভবিষ্যতে ও বহাল তবিয়তে চলবে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘এটাই ক্যাম্পাসের নিয়ম। এটা তোমাকে কেন সবাইকেই মানতে হবে।’ এ বিষয়ে হাবিব বলেন, ফেসবুক কেন, যেকোনো মাধ্যমে মত প্রকাশের অধিকার আমার আছে। এ অধিকারে কারো হস্তক্ষেপ দুঃখজনক।’
হাবিবের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত রাসেল বলেন, ‘এখানে আমাদের হলের ব্যাপার আছে কিছু। সিনিয়রদের কিছু বিষয় আছে। হলে বলা হয়েছে, সিনিয়ররা ছিল। আপনি তো চুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে সবকিছু জানেন। আমাকে সিনিয়ররা বলছে, তাই আমি ওকে ডাকাইছি। আপনি সাংবাদিক, আপনার সাথে আমার লেনদেন কি বলেন? আমি আমার রুমে কাকে ডাকাবো এবং কি জিজ্ঞেস করব, তার জবাবদিহিতা আমি কেন আপনাকে দেব।’
শিক্ষার্থীরা জানান, একটি গ্রুপ চুয়েটের তিস্তা ও সাঙ্গু বাসকে, আর অন্য গ্রুপটি সুরমা বাসকে নিজেদের বলে দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছে। এমনকি করোনা মহামারি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর সাঙ্গু বাসটির পেছনে একটি গ্রুপ তাদের নিজেদের দলের নাম লিখে আধিপত্যের জানান দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রং দিয়ে লেখাটি মুছে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘চুয়েটের বাস শিক্ষার্থীদের জন্য। যে আগে যাবে, সে আগে সিট পাবে। বাস কারও পৈতৃক সম্পত্তি, এমন দাবি করাও অপরাধ।’
দীর্ঘদিন ধরে চুয়েটের বাসে সিট দখল নিয়ে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে বাস দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে হবে জানান ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল ইসলাম।