রুয়েটে কাফনের কাপড় পাঠানোয় ৪ কর্মকর্তাকে আদালতে তলব
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে গত ২১ ডিসেম্বর ডাকযোগে চিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা জিডির বিষয়টি তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির চার কর্মকর্তাকে আদালতে তলব করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ মে) এই চার কর্মকর্তার নমুনা স্বাক্ষর/লেখা সংগ্রহ করার লক্ষ্যে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৮ মে) রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
উল্লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, সূত্রে বর্ণিত জিডির তদন্ত, সত্যতা যাচাই করার প্রয়োজনে বিতর্কিত ব্যক্তি রুয়েটের পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আল বেরুনী ফারুক, নির্বাহী প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব ও সিনিয়র সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন ইতির স্বাক্ষর/লেখা সংগ্রহ করা এবং হ্যান্ড রাইটিং পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞ আদালতে হাজির করার জন্য আবেদন করেছেন। জিডি সংক্রান্তে সঠিক তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের নমুনা স্বাক্ষর/লেখা সংগ্রহের জন্য আগামী ৯ মে আদালতের উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।
জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর রুয়েট শিক্ষক সমিতি ও শুদ্ধাচার কমিটির সদস্যরা কয়েকজন কর্মকর্তাকে নির্ধারিত সময়ে অফিসে হাজির না হওয়া ও প্রায়ই অফিসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। এদের মধ্যে রুয়েটের পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আল বেরুনী ফারুকও ছিলেন। ওই দিন দুপুরে তিনি শুদ্ধাচার কমিটি ও শিক্ষক সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়ান এবং তাদের দেখে নেবেন বলে হুমকি প্রদান করেছিলেন।
এরপর গত ২১ ডিসেম্বর রুয়েটের ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার নামে ডাকযোগে চিঠি আসে। চিঠিতে প্রেরকের ঠিকায়নায় ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ উল্লেখ ছিল। চিঠি খুললে এর ভেতরে সাদা কাফনের দু'টি করে টুকরো পায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা। চিঠিতে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে শাহ মো. আল বেরুনী ফারুক, মোতাহার হোসেনসহ তাদের সহযোগীরা জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেন হুমকি পাওয়া একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। তবে আল বেরুনী ফারুক এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
কাফনের কাপড়ের মাধ্যমে মৃত্যুর হুমকিপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সেখ, গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন, রুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রবিউল আওয়াল, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক, রুয়েট শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া মো. জগলুল সাদত, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন, কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দীন আহম্মদ, ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মামুনুর রশীদ, সহকারী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ ও সেকশন অফিসার প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম রোজ।
চিঠিতে সাদা কাপটের টুকরো পাওয়ার ঘটনায় ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মতিহার থানায় একটি ডিজি (জিডি নং-১১৬০) করেন। জিডিতে উল্লেখ ছিল, এভাবে শিক্ষক-কর্মকর্তার নামে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে খামের মধ্যে কাপনের কাপড় আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ও ভয়ভীতির সঞ্চার হয় এবং সকলে প্রাণনাশের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই ঘটনার সঙ্গে গত ৬ ডিসেম্বর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিদর্শন কমিটির সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণার বিষয়টি জিডিতে উল্লেখ করে এর সঠিক তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও যাচাই-বছাই করার প্রয়োজনে বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই আদালত বিতর্কিত এসব ব্যক্তিদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে তলবের বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েটের পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আল বেরুনী ফারুক বলেন, ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তার কাছে ডাকযোগে চিঠির খামের মধ্যে সাদা কাগজ পাঠানো হয়েছিল। এই ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছিল সেখানে আমাদের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছিলো। হয়তো ওই চিঠির খামের উপরে হাতের লেখা মিলানোর জন্য আমাদেরকে আদালতে ডাকা হয়েছে। আমরা সেখানে অবশ্যই যাবে।