০৭ মে ২০২৩, ২২:৪৭

সুসম্পর্ক থাকা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন দিতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!

বশেমুরবিপ্রবি  © ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক ড. হাসিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। এ বিষয়ে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা আজ রবিবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। 

লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ড. হাসিবুর রহমান পরীক্ষার আগে তার সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ করতেন। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারে ড. হাসিবুর রহমানের কোর্সের পরীক্ষার পরে তারা শফিকুল ইসলাম হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থীর ব্যাগে ড. হাসিবুর রহমানের হাতে লেখা উত্তরের দিকনির্দেশনাসহ চারটি প্রশ্ন পেয়েছিলেন, যার সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল ছিল।

এছাড়া ২০২২ সালে ডিসেম্বর চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারে ড. হাসিবুর রহমানের কোর্সের পরীক্ষার তিনদিন আগে সুমাইয়া আফনান নাহিন নামে এক শিক্ষার্থী তার এক সহপাঠীকে চারটি প্রশ্নের সাজেশন দিয়েছিল, যা পরীক্ষায় হুবহু এসেছিল।

অভিযোগকারীদের দাবি, হৃদয় এবং সুমাইয়া আফনান নাহিনের সাথে ভালো সম্পর্কের জেরে ড. হাসিবুর রহমান তাদের প্রশ্ন সরবারহ করতেন।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, তার সাথে ভালো সম্পর্কের জেরে কিছু শিক্ষার্থীর সিজিপিএ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিষয়টি অনেক শিক্ষার্থী জানলেও একাডেমিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকায় এতদিন প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।

এ বিষয়ে সুমাইয়া আফনান নাহিন বলেন, এধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরীক্ষার আগে স্যার সাজেশন হিসেবে ক্লাসে ৭-৮ টা প্রশ্ন দিয়েছিলেন। যারা ক্লাস করেনি তাদের কেউ কেউ আমার কাছে সাজেশন চেয়েছিল। তখন আনি তাদের ৭-৮ টি প্রশ্নই বলি। এখন তারা আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বলছে আমি ৪ টি প্রশ্ন বলেছি আর সেগুলোই এসেছে। কিন্তু এমন কিছুই ঘটেনি। আর আমি প্রশ্ন পেলে নিশ্চয়ই আর কাউকে সেটা দিতাম না। স্যার এই সাজেশন ক্লাসে দেয়াতেই সেটা শেয়ার করেছি।

শফিকুল ইসলাম হৃদয় বলেন, স্যার আমাকে প্রশ্ন নয় সাজেশন হিসেবে কিছু টপিক বলেছিলেন। আমি প্রতি পরীক্ষার আগে সব শিক্ষকদের কাছেই পরামর্শ চাই কোনগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কিভাবে পরীক্ষার খাতায় উত্তর সাজাতে পারি। স্যারের কাছেও তেমন পরামর্শই চেয়েছিলাম এবং স্যারও আমাকে শুধু বুঝিয়ে দিয়েছেন কোনটা কিভাবে লিখতে পারি। এক্ষেত্রে বুঝানোর স্বার্থে বিগত কোনো প্রশ্ন ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু তিনি আমাকে প্রশ্ন সরবরাহ করেননি। প্রথম বর্ষে আমার রেজাল্ট খারাপ হলেও পরবর্তীতে আমি ভালো ফলাফল করায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এমন অভিযোগ করছে।

অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. হাসিবুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সবসময়ই সাজেশন হিসেবে কিছু টপিক দেই কিন্তু কখনোই হুবহু প্রশ্ন বলে দেইনি। এগুলো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এগুলো করা হয়েছে এবং এর পেছনে কোনো শিক্ষকের ইন্ধন রয়েছে বলে ধারণা করছি।

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার বলেন, আমি তাদের অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল উপাচার্য স্যারের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।