টমেটোর উচ্চ ফলনে হাবিপ্রবিতে ‘টমেটো’ উৎসব
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্ৰযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের নিয়ে টমেটো উৎসব করেছেন কৃষি অনুষদের বায়োকেমিস্ট্ৰি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল হক হেলাল। টমেটো চাষে বায়োপেস্টিসাইড হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারে ব্যাপক ফলন পাওয়ায় এ উৎসবে মেতেছেন তারা।
শুক্ৰবার (৭ এপ্ৰিল) বিশ্বিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে ড. আজিজুল হকের নেতৃত্বে টমেটো উৎসবে শিক্ষার্থীরা কেউ পলি ব্যাগ কেউবা বাজার ব্যাগ নিয়ে সরাসরি মাঠ থেকে ইচ্ছে মত পাকা টমেটো আহরণ করে। উক্ত গবেষণা মাঠে মাত্র ছয় শতক জমিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যাবহার করে টমেটো চাষের গবেষণায় প্রায় ৪ গুন বেশি ফলন পান গবেষক ড. আজিজুল হক ও তার দল।
এই গবেষণা থেকে প্রায় ৬০ মনের বেশি টমেটোর ফলন পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা যায়, ইতোমধ্যেই ৩০ মনের অধিক টমেটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যেও বিতরণ করেছেন গবেষক দলটি। হাবিপ্রবির বাইরেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ, সম্প্রতি বিদেশেও তার এই টমেটো পাঠিয়েছেন বলে জানান প্রধান গবেষক ড. আজিজুল হক আরও জানান।
আরও পড়ুন: এবার নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ কুবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে
বায়োকেমিস্ট্ৰি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক ড. আজিজুল হক বলেন, উদ্ভিদের রোগবালাই প্রতিরোধ করতে কীটনাশকের ব্যবহার প্রতিনিয়তই বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত লাভের আসায় বিভিন্ন রাসায়নিক প্রয়োগ করে ফসলের ওজন বৃদ্ধি এবং ফলন বৃদ্ধি করা হয়। রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
কিন্তু এখানে কোনও প্ৰকার কীটনাশক ব্যাবহার করা হয় নি, তাই মানবস্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হবে না। তার টমেটোর এই উচ্চ ফলনে যাতে টমেটো গুলো নষ্ট না হয় তাই আমরা টমেটো গুলো সংগ্রহ করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে বিতরণ করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা গবেষণা করে পেয়েছি এই পাকা টমেটো বাসায় আরও এক সপ্তাহের মত ভালো থাকবে। শিক্ষার্থীরা রুমে রেখেই বেশ কিছুদিন এই টমেটোগুলো খেতে পারবে।
উক্ত উৎসবে উপস্থিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ স্টুডেন্টস ইন এগ্রিকালচারাল এন্ড রিলেটেড সায়েন্সেস (ইয়াস) বাংলাদেশ, হাবিপ্রবি শাখার নেতৃবৃন্দ। এ সময় ইয়াস বাংলাদেশ হাবিপ্রবি শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান তুষার জানান, আমরা সবাই খুবই আনন্দিত এরকম উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে। স্যারকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের নিয়ে এমন আয়োজন করার জন্য সেই সাথে গবেষণায় এই সফলতার জন্য স্যারকে অভিনন্দন। এই ধরনের গবেষণা প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিলে দেশের কৃষিখাতে ব্যাপক অবদান রাখবে বলে আশা করছি।
উৎসবে দুই ব্যাগ ভর্তি টমেটো নেওয়া শিক্ষার্থী হাসনাত সানি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে টমেটোর এমন উচ্চ ফলনে আমরা সকলে উচ্ছ্বাসিত স্যারের এমন কীটনাশক মুক্ত টমেটো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী, আজকের এই টমেটো উৎসবে থাকতে পেরে আমরা সকলে আনন্দিত, এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ সারা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়ুক এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
উল্লেখ্য, বায়পেস্টিসাইড হিসেবে টমেটো চাষে ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহার গবেষণায় অনুদান প্রদান করেন ইউনেস্কোর দ্যা ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সায়েন্সেস (টাওয়াস)। এছাড়াও গবেষক ড. আজিজুল হক বর্তমানে বেগুনসহ অন্যান্য ফসলে বায়পেস্টিসাইডের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন।