যবিপ্রবির হলে রড-পাইপ-বেল্ট দিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীকে মারধর
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে হলে আটকে রেখে ৪ ঘণ্টা ধরে মারধর করেছেন তারই একাধিক সহপাঠী। মারধরের পর তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন তারা। রবিবার (০২ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে মারধরের শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মারধরের শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন। তার ভাষ্য, তাকে হলে আটকে পুরো এ ৪ ঘণ্টা যাবৎ অভিযুক্তরা তার উপর অ-মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন। তাকে হলে রড, জিআই পাইপ ও বেল্ট দিয়ে মারধর করেছেন। শুরুতে তারা (অভিযুক্ত) তার (ভুক্তভোগী) নাম-পরিচয় জানতে চান। নাম-পরিচয় শুনে তারা বলেন ‘তুই তো বড় ভাইদের সম্মান করতে জানিস না, তুই তো সিন্ডিকেট চালাস’।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন এন্ড ফুড টেকনোলজি (এনএফটি) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনাবাসিক শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্তরা সবাই একই বর্ষের কম্পিউটার সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের একজনের নাম শোয়েব অপর জন সালমান। এসময় তাদের সঙ্গে আরও একাধিকজন এ মারধরে অংশ নেন।
ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, সোহেল নামের এক শিক্ষার্থী তাকে ডেকে বলেন, সিনিয়র ভাইয়েরা ফোন দিলে নাকি আমি রিসিভ করি না! তিনি আমাকে বলেন ‘ভাইদের সাথে দেখা কইরো’। এরপর এদিন যোহরের নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ থেকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সালমান (সিএসই চতুর্থ বর্ষ) তাকে হলের ৫২৮নং রুমে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ঢাবির ছাত্র অধিকার কর্মীকে হলে আটকে পেটাল ছাত্রলীগ
তিনি বলেন, ‘‘রুমে ঢোকার পরে অভিযুক্ত শোয়েব ও সালমানসহ নীল পাঞ্জাবি পরিহিত একজন, দুপুর ২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমাকে চড়, থাপ্পড়, বেল্ট, জিআই পাইপ ও স্টাম্প দিয়ে মারধর করেন। পরে আমার বন্ধু ও ভাইয়েরা জানতে পেরে আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।’’
সদর হাসপাতালের ডা. ফাহিম বলেন, রোগী আপাতত আশঙ্কা মুক্ত রয়েছেন। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছি, রিপোর্টগুলো হাতে পেলে এবং তার শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শোয়েব মারধর ও চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাউকে রুমে আটকে রেখে চাদা দাবি করেছি বা মেরেছি এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমনকি এ ব্যাপারে আমি জানিও না। আমার সাথে ইসমাইলের কোন দ্বন্দও নেই। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট।’’
অপর অভিযুক্ত সালমান বলেন, ইসমাইল আমাদের বন্ধু। তাকে মারধর করবো, এটা কোনভাবেই সম্ভব না। আজকে আমাদের বর্ষের ইফতার মাহফিল ছিলো। তাই এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলছিলাম। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা বিষয়টি জানা মাত্রই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে হল থেকে উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে এসেছি। উদ্ধারের পর তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। পরে তাৎক্ষণিক তাকে যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ঘটনা জানার সাথে সাথে প্রভোস্ট বডি সেখানে গিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছেন। আমি প্রভোস্ট বডিকে নির্দেশ দিয়েছি, ওই রুম সিলগালা করে দেওয়ার জন্য। আর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যদি আবাসিক হয়, তাহলে তাকে যেন হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।