সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়েও স্বর্ণপদক পাচ্ছেন না যবিপ্রবির একাধিক শিক্ষার্থী
আগামীকাল শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ৪র্থ সমাবর্তনে ২২ জন গ্রাজুয়েট চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পাচ্ছেন। তবে এই স্বর্ণপদক প্রাপ্ত গ্রাজুয়েট বাছাইয়ের নিয়মের কাছে হেরে গেছেন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ও তাঁদের অর্জন। সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়েও অনেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছেন না। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাজুয়েটরা।
জানা গেছে, চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পেতে প্রত্যেক অনুষদে ডিস্টিংশনসহ সর্বোচ্চ সিজিপিএ ধারী হতে হবে। ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডের জন্য অনুষদের বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং ডিনস্ অ্যাওয়ার্ড পেতে বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী হতে হবে। তবে যে বিভাগের যে শিক্ষার্থী চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পাবেন ওই শিক্ষার্থী এবং ওই বিভাগের ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির জন্য বিবেচিত হবেন না। এছাড়া পুনঃভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা কোনো পদকের জন্য বিবেচিত হবেন না।
পুনঃ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিধিনিষেধের কারণে অনুষদের মধ্যে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করেও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কোনো পদকের জন্যই মনোনীত করেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়েও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবেন বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।
২০১৬-১৭ সেশনে জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৯২ পেয়েও স্বর্ণপদক না পাওয়া শিক্ষার্থী ফিশারীজ এন্ড মেরীন বায়োসাইন্স বিভাগের সৌমিক মজুমদার। তিনি বলেন, যবিপ্রবি দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে কোনো সেশনজট নেই। অনেক দ্রুততম সময়ে যবিপ্রবিয়ানরা সমাবর্তন পেয়ে থাকে। আসলে আমরা ভাগ্যবান। সমাবর্তন দিনটি যদিও অত্যন্ত উৎসবমুখর দিন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এই দিনটি আমার জন্য খুশির দিন নয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কাছে আমি হেরে গেছি। আমি রি-এডমিটেড(পুন:ভর্তি) শিক্ষার্থী ছিলাম। অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই আমি পড়াশোনা করে অনুষদে প্রথম (১ম) হয়েছি। কিন্তু পুনঃভর্তির জন্য অ্যাওয়ার্ডের এমন নিয়ম আছে তা জানতাম না। রেজাল্টের জন্য আমি ভার্সিটি থেকে চ্যান্সেলর এ্যাওয়ার্ড নমিনেটেড শিক্ষার্থী ছিলাম। কিন্তু রি-এডমিটেড হওয়ায় কোনো ধরনের পদকের জন্য নির্বাচিত হচ্ছি না। আরও ৫-৬ জন শিক্ষার্থী আছেন, যারা ফ্যাকাল্টিতে প্রথম স্থান অর্জন করে শুধুমাত্র রি-এডমিটেড হওয়াতে সব ধরনের পদক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আসলে নিয়মের কাছেই হেরে গেছে আমাদের মেধার মূল্যায়ন। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, নিয়মের জন্যই আজ মেধার স্বীকৃতিটা পেলাম না। এজন্য সমাবর্তন দিনটি অত্যন্ত আনন্দের হলেও আমি খুশি থাকতে পারছিনা।’
ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের এগ্রো প্রোডাক্ট এন্ড প্রসেসিং টেকনোলজি (এপিপিটি) বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩.৯১ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী মহসিনা হোসাইন মিশা। ২০১৫-১৬ সেশন ভর্তি হয়ে ২০১৬-১৭ সেশনে পুন:ভর্তি সম্পন্ন করেন তিনি। মহসিনা মিশা বলেন, প্রথম থেকেই সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করে অনুষদের মধ্যে ১ম হই। আশা ছিল একটি সুন্দর স্বীকৃতি পাব। কিন্তু যখন জানতে পারলাম রি-এডমিটেড হওয়াতে কোনো পদক পাচ্ছি না, তখন নিজের অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিল না। আসলেই এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, রি-এডমিটেড হলে এর কুফলগুলো যদি ভর্তির সময় জানিয়ে দিতো তাহলে আমি অন্য কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এটা নিয়ে চিন্তা করা উচিত। রি-এডমিটেড কেন স্বীকৃতি দেওয়া হবে না? এরাও তো পড়াশোনা করেছে, সর্বোচ্চ পরিশ্রমটুকু করেছে। কেন তাদের সাথে এমনটা হবে?