সমাবর্তনের ফি নিয়ে যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) চতুর্থ সমাবর্তনের ফি নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কথা তুলে ধরে সমাবর্তন ফি কমানোর দাবি জানান তাঁরা। ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সদ্য স্নাতক শেষ করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য চার হাজার টাকা অনেক বড় বিষয়। এই অর্থ সে কীভাবে জোগাড় করবে? যারা প্রাইভেট পড়ায় তাদের ক্ষেত্রে এই অর্থ অনেক বেশি। কেননা টিউশনির অর্থ দিয়ে একজন শিক্ষার্থী নিজের খরচ চালায়। কাজেই ফি আরও কমানো দরকার।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর যবিপ্রবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সমাবর্তনের রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানানো হলে রেজিষ্ট্রেশন ফি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
বিজ্ঞপ্তিতে ৪র্থ সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের জনপ্রতি ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও একদিন পর এক হাজার টাকা কমিয়ে চার হাজার টাকা করা হয়।
২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আল-মামুন লিখন এ প্রতিবেদককে জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের রেজিট্রেশন ফি ৪০০০-৬০০০ টাকা।টাকার পরিমাণটা অনেক বেশিই হয়ে যায় সদ্য গ্রাজুয়েটদের জন্য।যতটুকু জানি দু-তিন ব্যাচ সিনিয়র ভাই-আপুদের বেশিরভাগেরই এখনো চাকরি হয়নি। এই সময়ে যবিপ্রবি প্রশাসনের এত বেশি রেজিট্রেশন ফি মেনে নিতে পারছি না। আশাকরি, যবিপ্রবি প্রশাসন রেজিট্রেশন ফি পুনরায় বিবেচনা করে শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্ত নিবে।
২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী স্বর্ণালি মল্লিক তার ফেসবুক টাইমলাইনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যবিপ্রবির সমাবর্তন ফি’র নোটিশ শেয়ার করে লেখেন, ‘‘এটা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ুয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখে থাপ্পড় দেয়ার মতো নোটিশ। যেখানে স্টুডেন্টরা বছরের সারামাস টিউশনি করে মাসের টাকা জোগাড় করে, তাদের কাছে এই নোটিশ প্রহসন মাত্র! অবিলম্বে রেজিষ্ট্রেশন ফি অর্ধেক করার জন্য ভিসি স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তা না হলে, আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের স্টুডেন্টের পক্ষে সমাবর্তনে যোগদান করা স্বপ্নই থেকে যাবে! বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে রেজিষ্ট্রেশন ফি ১৫০০ টাকা সেটা যবিপ্রবিতে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয় কিভাবে!! আশা করি, কর্তৃপক্ষ স্টুডেন্টদের সমস্যা বিবেচনা করে দ্রুত সমাধান করে আমাদেরকে সবাইকে কনভোকেশনে যোগদানের সুযোগ করে দিবেন।’’
রসায়ন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী রাশেদ খান বলেন, ৪র্থ সমাবর্তনের জন্য ধার্য্যকৃত রেজিষ্ট্রেশন ফি আমাদের মত সদ্য গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে কালো গাউন পরার স্বপ্ন সবারই থাকে। তবে এই মাত্রাতিরিক্ত ফি সেই স্বপ্নের পথে এখন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকার অভাবে আমার বন্ধুরা সবাই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, এটা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। আমরা চাই সার্বজনীন অংশগ্রহণমূলক একটি সমাবর্তন, যেখানে হাজারো প্রাণ একসাথে মিলবে।
এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আল-জুবায়ের রনি বলেন, ‘‘সমাবর্তন এর নোটিশ অনুযায়ী নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি অতিরিক্ত, অসহনশীল, অযৌক্তিক ও ব্যয়বহুল। ঢাবি, বাকৃবি সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও বেশি, এত উচ্চ মানের রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে না বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই। শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরাই অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পেলে, আয়োজন বৃথা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এখনো মাস্টার্সে পড়াশোনা করছে বা জবে ঢুকে নাই।সুতরাং শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আয়োজক কমিটি পুনর্বিবেচনা করে নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি এর অর্ধেক এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। অন্যথায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর পক্ষে সমাবর্তন বয়কট করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’’
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের সমাবর্তনের মোট ব্যয় হবে এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া হবে ৮০ লাখ টাকা, ইউজিসি থেকে পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করবে এবং বাকি ৪৫ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তুকি দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার প্রদানে এক হাজার (১০০০) টাকা এবং খাবার পরিবেশনে প্রায় তিনশ (৩০০) টাকা ব্যয় হওয়ায় ফি বেশি হয়েছে। গত সমাবর্তনে জনপ্রতি ৩৫০০ টাকা হলেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য এবার তা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।ত বে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডে বিবেচনা করেই পরবর্তীতে এক হাজার টাকা কমানো হয়েছে।