দেশে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল গঠন করা উচিত: ইউজিসি সদস্য
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, এখন আমরা উচ্চশিক্ষায় স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং নিয়ে ভাবছি। দেশে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল গঠন করা উচিত, যাতে আমাদের গবেষণার গুরুত্ব বাড়ানো ও গবেষণাকে অর্থবহ করা যায়।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে পুরকৌশল বিভাগের উদ্যোগে এবং ইউজিসি’র সহযোগিতায় ‘পুরকৌশল বিষয়ক অগ্রগতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। যাতে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংযোগ বাড়ানো যায়। প্রতিবছর আমরা কী পরিমাণ পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করতে পারছি সেটা দিয়েই কিন্তু আমাদের দেশের গবেষণা সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই দিকটাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনোযোগ বাড়াতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির সাথে কোলাবরেশন যত বেশি বাড়ানো যাবে, ততবেশি গবেষণা কার্যক্রমে গতি আসবে।
আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়
তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার ৫১ বছরে দেশের সর্বক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বৈশ্বিক অগ্রগতির সাথে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। ইউজিসি চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় গুণগত মানোন্নয়নে ঘটাতে। আমাদের দেশের মাত্র ১০% শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যায়। তবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ২% থেকে গত ১০ বছরে ১৮%-এ উন্নীত হয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ছাড়া কোনো দেশের অগ্রগতি কল্পনা করা যায় না। সভ্যতার বিকাশে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দেশের যত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, সবগুলোই ইঞ্জিনিয়ারদের নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া সম্ভবপর নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সর্বশেষ অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের গবেষণা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটাতে এই আন্তর্জাতিক কনফারেন্স নিঃসন্দেহে কাজে আসবে। একইসাথে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন আরও সুসংহত এবং সুদৃঢ় হবে বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক এই কনফারেন্স চেয়ার ও পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনফারেন্স সেক্রেটারি ও পুরকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বশির জিসান।
আরও পড়ুন: র্যাংকিংয়ে ভারত-পাকিস্তানের ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশ
পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক মায়শা কবির ও মো. আসিফুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন কনফারেন্সের কী-নোট স্পিকার ও আইআইটি, খড়গপুর-এর অধ্যাপক ড. অঞ্চলি পাল, কনফারেন্সের আমন্ত্রিত বক্তা ও ভারতের ওড়িশ্যার কেআইআইটি’র অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের অধ্যাপক ড. তারাশঙ্কর পাল এবং জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক শোভন শাহাবুদ্দিন রাজ।
এছাড়াও আগামী ২২ ডিসেম্বর কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি থাকবেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়র এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এম. শামীম জেড. বসুনিয়ার থাকার কথা রয়েছে। এছাড়াও কনফারেন্সের সাইন্টিফিক ও টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিতের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমের থাকার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন প্রধান বক্তা এবং ২০০ জনেরও বেশি শিক্ষাবিদ, গবেষক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দিচ্ছেন। কনফারেন্সে মোট ১৫১টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন, ১৬টি টেকনিক্যাল সেশন ও ৪টি কী-নোট সেশন রয়েছে। বিশ্বব্যাপী পুরকৌশল বিষয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় একাডেমিশিয়ান, বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষাবিদদের একত্রিতকরণ এবং নতুন-নতুন ধারণা ও জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিগুলো তুলে ধরা এই সম্মেলনের লক্ষ্য।