১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০৪

ছাত্রলীগের মারামারির খবর সংগ্রহে গিয়ে নিজেই মারধরের শিকার

লোগো  © ফাইল ছবি

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে এক সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারামারির খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিক নিজেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

জানা যায়, গতকাল সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম মোস্তফা ও ২০২০-২১ বর্ষের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন রাফির মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সাথে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।

মারামারির খবর কিছুক্ষণের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসেও চলে যায়। পরে বিষয় জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আরটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি মো. রিয়াদুল ইসলাম মুঠোফোনে নাঈম মোস্তফাকে কল দেন। তখন তিনি এই বিষয়ে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং ওই সাংবাদিককে সালাম হলের সামনে আসতে বলেন।

ওই সাংবাদিক বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য সালাম হলের সামনে আসলে অভিযুক্ত নাঈম মোস্তফা রিয়াদুলকে তার আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা রাজনৈতিক সিনিয়রদের মাধ্যমে বেধড়ক মারধর করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, এসময় ওই সাংবাদিকের উপর চড়াও হন শাকিল মোস্তফা (অর্থনীতি, ২০১৮-১৯), আরমান মিহাম (শিক্ষা, ২০১৮-১৯), নাঈম মোস্তফা (শিক্ষা, ২০১৯-২০), আকরাম হোসাইন (এমআইএস, ২০১৯-২০), জোভান আহমেদ নাঈম (শিক্ষা প্রশাসন, ২০১৮-১৯) প্রলেক্স বড়ুয়া (বাংলা, ২০১৮-১৯), হাসিব শান্ত ও মোহাম্মদ আদনান আলী। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মারধর করেন।

আরও পড়ুন: নোবিপ্রবি গবেষণা সংসদের যাত্রা শুরু

ভুক্তভোগী মো. রিয়াদুল ইসলামের অভিযোগ, মারধরের একপর্যায়ে নাঈম মোস্তফা ও শাকিল মোস্তফা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। ঘটনাস্থলে কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক আসলে মোবাইল ফোন ফেরত দেন। এসময় শাকিল মোস্তাফা অনবরত গালাগালি করতে থাকেন এবং বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে টাকা খেয়ে নিউজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা’।

মারধরের খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিক নিজেই মারধরের শিকার হয়েছেন এমন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ইকবাল হোসেন সুমন, শাহানা রহমান এবং সালাম হলের প্রভোস্ট ড.আনিসুজ্জামান রিমন ও সহকারী প্রভোস্ট রায়হান আহমেদ রিমন। তারা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শাকিল মোস্তফা, আরমান মিহাম, নাঈম মোস্তফা, আকরাম হোসাইন, জোভান আহমেদ নাঈম, প্রলেক্স বড়ুয়া, হাসিব শান্ত ও মোহাম্মদ আদনান আলী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী এবং শীর্ষ পদপ্রার্থী জাহিদ হাসান শুভর অনুসারী।

এর আগে সালাম হলে মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায়ও নাম আসে শাকিল মোস্তফা, আদনান আলী, প্রলেক্স বড়ুয়া সহ একই রাজনৈতিক গ্রুপের বেশ কয়েকজনের। বিষয়টি জানতে চাইলে ছাত্রলীগ পদপ্রার্থী জাহিদ হাসান শুভ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এখনো কিছু জানি না।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমতি। এক যৌথ বিবৃতিতে সমিতির সভাপতি আব্দুল কবীর ফারহান ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন পাঠান এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানান।

জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে সাংবাদিক হেনস্তার এটি অত্যন্ত ঘৃন্য কাজ। আমরা ঘটনা তদন্ত করে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করব।