পরীক্ষা শেষের ৭ মাস পর বশেমুরবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরীক্ষার শেষ হওয়ার ৭ মাস পর তাদের বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বলছেন দীর্ঘদিন পর প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ প্রমাণ করে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- এম সাদিদ এবং আব্দল্লাহ মোল্লা। তার দুজনের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের (২০১৫-১৬) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, আইন বিভাগের সভাপতি মানসুরা খানম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ২৯ আগস্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর প্রেরণ করা হয়। যেখানে একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে দুই শিক্ষার্থীর খাতা বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গত ২৪ আগস্ট আইন বিভাগের একাডেমিক কমিটির ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এল এল.এম-এর শিক্ষার্থী এম সাদিদ এবং আব্দল্লাহ মোল্লা, এল এল. এম. ২য় সেমিস্টার পরীক্ষার (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০, পরীক্ষা ২০২০) কোর্স নং LAW521, LAW523, LAW525, LAW527, LAW529 হুবহু মিল পাওয়ায় উল্লেখিত কোর্স সমূহের খাতাগুলো বাতিলের সুপারিশ এবং শৃঙ্খলা বোর্ডে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
পরবর্তীতে ২০ সেপ্টেম্বর উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২০ (২য় সেমিস্টার) পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত কোর্স নং LAW521, LAW523, LAW525 LAW527, LAW529 পরীক্ষায় আপনি অসদুপায় অবলম্বন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে চলতি সেমিস্টার (জুলাই ডিসেম্বর-২০২০) বহিষ্কার করা হলো।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শৃঙ্খলাবিধির কোনো ধারায় পরীক্ষার খাতায় হুবহু মিল পাওয়া গেছে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা যাবে—এমন কোনো নিয়ম উল্লেখ নেই।
পরীক্ষা শেষের দীর্ঘদিন পর ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বহিষ্কার হওয়া দুই শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকটা একই ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছেন তারা। ফেসবুক পোস্টে তারা দাবি করেছেন, ‘সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে অন্যায়ের বিচার চাই। গত ০৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার ৭ মাস পর রেজাল্ট প্রকাশিত হলে আমি দেখি আমাকে ফেল করানো হয়েছে। যোগাযোগ করলে বলা হয় আমার খাতা শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ এক্সামে যোগসাজশ করে লেখা। কিন্তু এক্সাম হলে এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। রেজাল্ট প্রকাশের প্রায় এক মাস পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখে জানতে পারি আমাকে ২ সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। অর্থাৎ আমি পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার ৭ মাস পরে বহিস্কৃত হই।’
ফেসবুক পোস্টে আবদুল্লাহ মোল্লা বলেন, ‘যেহেতু আমার মাস্টার্সের লাস্ট সেমিস্টার ছিল; তাই দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করা যৌক্তিক নয় বলে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তার সুপারিশে নাকি এক সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে আমি এক সেমিস্টার বহিষ্কারের নোটিশ পাই। ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করলে আমাকে বলা হয় তুমি দোষ স্বীকার করে নাও, তোমাকে আমরা ক্ষমা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমার প্রশ্ন ছিল আমি কি দোষ করেছি যে আমি দোষ স্বীকার করব? পরীক্ষা হলে আমি কোন অসাধুপায় গ্রহণ করিনি। তাহলে যোগসাজশ বিষয়টা কি আমি বুঝি না। আমার উপর শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার পরীক্ষা সমাপ্ত ৭ মাস পরে মিথ্যা অভিযোগে আইন বহির্ভূতভাবে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: নামের ভুল বানানে চলছে বশেমুরবিপ্রবির কার্যক্রম
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি মানসুরা খানম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তাদের খাতাগুলো মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, তাদের খাতাগুলোতে হুবহু মিল রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমাদের মনে হয়েছে তারা পরীক্ষায় অনৈতিক উপায় অবলম্বন করেছেন। তাদের সিট পাশাপাশি ছিল। পরবর্তীতে আমরা একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের খাতা বাতিলের সুপারিশ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে চিঠি প্রদান করি এবং শৃঙ্খলা কমিটি তাদের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দুই শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে।’
‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ থেকে তাদের বহিষ্কারের অভিযোগের বিষয়ে মানসুরা খানম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রয়োগের যে দাবি করা হচ্ছে এমন কোনো বিষয় এখানে ঘটেনি। মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফলাফলের কিছুদিন পূর্বেই মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তাদের উভয়েরই ফলাফল রয়েছে। এই সেমিস্টারে সুস্পষ্ট কারণের ভিত্তিতে তাদের খাতা বাতিল করা হয়েছে। কারণ আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করেই সার্টিফিকেট অর্জন করুক। পরীক্ষায় কোনো ধরনের অনৈতিক উপায় অবলম্বন করে নয়।’
এ বিষয়ে স্বাক্ষরকারী উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার বলেন, ‘পরীক্ষায় কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলে সেই সংক্রান্ত চিঠিগুলো শিক্ষকরা আমাদের নিকট প্রেরণ করেন। এর আলোকে উপাচার্য স্যারের সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিংয়েই শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই দুই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও একইভাবে দুই সেমিস্টারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে আমি কাগজপত্র মিলিয়ে দেখি; তারা মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে আমি আইন অনুষদের ডিনের সাথে প্রথমে কথা বলি এবং পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে এক সেমিস্টারের বহিষ্কার নোটিশ দেই।’
সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো শিক্ষক প্রভাবিত করেছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এস.এম গোলাম হায়দার বলেন, ‘প্রভাবিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে তো বেশ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন, সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এছাড়া, মিটিংয়ের সভাপতি ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর স্যার নিজেই। তাই এখানে কারও প্রভাব বিস্তারের সুযোগই নেই।’